বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পরিস্থিতি বুঝতে অন্তত ৫ লাখ পরীক্ষা জরুরি

আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০১:৩২

করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ জন। নতুন করে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে আরো ৪১ জন। এ নিয়ে দেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৪ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসেকরা আশঙ্কা করছেন। 

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ব্যাপক হারে ভাইরাসটির পরীক্ষা বাড়ানো হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা (স্যাম্পল) সংগ্রহ করা হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৭৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ৫ লাখ মানুষের পরীক্ষা করা হলে দেশে করোনার অবস্থার বোঝা যাবে। এ পর্যন্ত মাত্র ৪ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। 

বর্তমানে ঢাকায় রয়টি এবং ঢাকার বাইরে সাতটি ল্যাবে শনাক্তকরণ পরীক্ষা চলছে। আজ ঢাকার বাইরে আরেকটি ল্যাব চালু হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তাই শনাক্তকরণ পরীক্ষার পরিধি সারাদেশে বাড়ানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, কয়েক হাজার মানুষের পরীক্ষা করে কিছুই বোঝা যাবে না। কয়েক লাখ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হলে দেশে আক্রান্তের হার বোঝা যাবে।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, কয়েক লাখ মানুষের পরীক্ষা করা হলে দেশে করোনার সার্বিক অবস্থা বোঝা যাবে। এদিকে সুস্থরা ফের আক্রান্ত হওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। মাদারীপুরের একজন রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবার আক্রান্ত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: সরকারি নির্দেশ অমান্য করে টিএমএসএসের কিস্তি আদায়, ১৫ কর্মী আটক

জানা গেছে, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পথে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৩ জন দেশে প্রবেশ করেছেন। মাত্র ৪ হাজার মানুষ বাদে বাকি লোকদের মধ্যে কতজন আক্রান্ত তা কেউ বলতে পারছে না। শনাক্তের বাইরে থাকা লোকগুলো সমাজে মেলামেশা করছেন। নিজের অজান্তেই ছড়িয়ে দিচ্ছেন কমরানা ভাইরাস। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা এবং জনগণের জীবনযাপনের প্রক্রিয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই এটি চতুর্থ স্তর বা মহামারিতে পরিণত হতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যত দ্রুত সম্ভব শনাক্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা (কন্ট্রাকট ট্রেসিং) সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পালিয়ে না থেকে জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে বেশি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। নতুন আক্রান্ত ৪১ জনের মধ্যে ২০ জন ঢাকার, ১৫ জন নারায়ণগঞ্জের। বাকিদের মধ্যে এক জন চট্টগ্রাম, এক জন কুমিল্লা ও এক জন কেরানীগঞ্জের। নারায়ণগঞ্জকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের নতুন রোগী পাওয়ার পর ঢাকার নয়টি এলাকার বিভিন্ন বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। ঐ এলাকার কেউ এখন বাইরে বের হতে পারবে না, সেখানে কেউ ঢুকতেও পারবে না। কোভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে যে এলাকায় রোগী পাওয়া যাচ্ছে, সে এলাকা পুরোপুরি লকডাউন করার নির্দেশনা ইতিমধ্যে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংক্রমণ শুরুর দিকে ঢাকার মিরপুরের টোলারবাগে রোগী পাওয়ার পর ঐ এলাকা আগেই লকডাউন করা হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, আদাবর, বছিলা, বাড্ডা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ভবন লকডাউন করার ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।

কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করতে পরীক্ষা বাড়াতে বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, চিকিৎসকেদর সুরক্ষায় পিপিইরও কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার একটি ভার্চুয়াল কনফারেন্সে বিভিন্ন স্থানের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় নয়টা এবং ঢাকার বাইরে সাতটা ল্যাব বসানো হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ভালো করে টেস্ট করানোর দায়িত্ব আপনাদের (স্বাস্থ্যকর্মী)। দেশের প্রতি উপজেলায় দিনে ১০ থেকে ২০টি করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যত বেশি নির্ণয় করতে পারি, পজিটিভ হলে আইসোলেট করে রাখতে পারব।’

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর শুধু ঢাকায় আইইডিসিআরেই পরীক্ষা হতো। পরীক্ষা কম হচ্ছে বলে অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এখন ঢাকার বাইরেও পরীক্ষা করা হচ্ছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়ার সাফল্যের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করাকে নিয়ামক মনে করছেন গবেষকেরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পিপিই যা লাগে দেবেন। পিপিই অনেক পাচ্ছি, দিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজনে আরো দেব। প্লেগের কথা শুনেছি, বসন্তের কথা শুনেছি। আমাদের দেশে এখন করোনার থাবা এসেছে। তবে আমরা এখনো অন্য দেশের তুলনায় ভালো আছি। মৃত্যুর সংখ্যাও কম, আক্রান্তের সংখ্যাও কম।’ পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সেজন্য কোয়ারেন্টাইনে যারা আছেন, তাদের সেই অবস্থায় থাকা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থসেবা কেন্দ্রে কর্মীদের হাজিরা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা পরিচালক, ডাক্তার, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আছেন, দেখবেন হাজিরা যেন ঠিক থাকে।’

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো কারো দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এক দিনে মৃত্যু ও আক্রান্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা গতকাল। আক্রান্তদের মধ্যে মোট ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে চার জন পুরুষ, এক জন নারী। ষাটোর্ধ্ব দুই জন, দুই জনের বয়স ৫০-এর বেশি, এক জন চল্লিশোর্ধ্ব। সারাদেশে আইসোলেশন বেড রয়েছে ৬ হাজার ১৪৩টি। মোট ৭ হাজার ৬৯৩টি আইসোলেশন বেড রয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউ বেডের সংখ্যা ১১২। আর ডায়ালাইসিসের সুবিধা রয়েছে ৪০টি বেডে। আইসিইউ ও ডায়ালাইসিসের সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নীতিনির্ধারণী মহল, সংবাদকর্মী সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটাকে মিডিয়া ব্রিফিং হিসেবে প্রচার না করে আমরা দৈনন্দিন স্বাস্থ্য বুলেটিন হিসেবে প্রচার করব।’

ইত্তেফাক/এসি