শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে অন্ধকার দিন

আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০৪

মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপে অন্ধকার দিন পার করল যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এক দিনে মারা গেছে ১ হাজার ৮০০ এর বেশি মানুষ। আর যুক্তরাজ্যে গতকাল মারা গেছে ৯৩৮ জন। 

মঙ্গলবার কেবল নিউ ইয়র্কেই ৭৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন মৃত্যু নিয়ে হোয়াইট হাউজও চিন্তায় পড়ে গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ভাবমূর্তি রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। পুরো বিশ্বে আক্রান্ত প্রায় ১৫ লাখ এবং মৃত্যু ৮৭ হাজার ছাড়িয়েছে। 

এদিকে ইউরোপেও মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, ইউরোপের পরিস্থিতি ভয়াবহ উদ্বেগের।

অন্ধকার দিন পার করল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য

ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার জানিয়েছে, গতকাল রাত সোয়া ১২ টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছে ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৩৫২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৮৭ হাজার ৪৩৫ জন। 

জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির বরাত দিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়া ডেইলি মেইল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৯০ জন। মোট মারা যায় ১২ হাজার ৯০৮ জন। বিশ্বে এক দিনে এতো মৃত্যু এখন পর্যন্ত হয়নি। 

এর আগে ৪ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩৪৪ জনের মৃত্যুর রেকর্ড করেছিল জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ৮ হাজারের বেশি মারা যায়। আর পুরো মার্চেই মারা যায় ৪ হাজারের বেশি। ১৬ এপ্রিলের পর প্রতিদিন ৩ হাজার করে মানুষ মারা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। 

এদিকে গতকাল রাতে ওয়ার্ল্ডোমিটারে দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৪ লাখ ১৮ হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ২৪০ জনের। এক দিনে আক্রান্ত বেড়েছে ১৮ হাজার ৭৫ জন এবং মৃত্যু বেড়েছে ১ হাজার ৩৯৯ জন।

মার্কিন মিডিয়া সিএনএন মঙ্গলবারকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অন্ধকার দিন’ বলে উল্লেখ করেছে। ৫৫ ভাগ মার্কিনি মনে করছেন, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন তেমন কোনো পদক্ষেপ নেননি। এজন্যই ভাইরাস এতো ছড়িয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রে করোনার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে নিউ ইয়র্কে। কেবল সেখানেই মঙ্গলবার মারা গেছে ৭৩১ জন। 
বুধবার পর্যন্ত রাজ্যে করোনায় প্রাণ হারিয়েছে ৫ হাজার ৫৮৯ জন। কেবল এই রাজ্যটিতেই আক্রান্তের সংখ্যা ইতালির মোট আক্রান্তের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। 

রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রিউ কুওমো বলেন, নিউ ইয়র্কে করোনার প্রাদুর্ভাব সর্বোচ্চ পর্যায়ের পৌঁছানোর কাছাকাছি। রোগীদের চাপে ভেঙে পড়েছে সেখানকার স্বাস্থ্যব্যবস্থা। একদিনে এতো মৃত্যু নিয়ে হোয়াইট হাউজেও আলোচনা চলছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে ‘যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি করোনা ভাইরাসকে ‘অদৃশ্য শত্রু’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এতো আক্রান্ত এবং মৃত্যু ঘটলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেখতে পাচ্ছেন।

যুক্তরাজ্যে গতকাল ২৪ ঘন্টায় ৯৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইউরোপের ইতালিতে এক দিনে ৯৬৯ জনের মৃত্যুর পর ব্রিটেনেই সবচেয়ে বেশি মারা গেল। মঙ্গলবার ব্রিটেনে মারা গিয়েছিল ৭৮৬ জন। এক দিনে ব্রিটেনে ১৫২ জন বা ১৯ শতাংশ বেড়েছে মৃত্যু। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯৭ জনে।

হু সতর্ক করেছে, ব্রিটেন ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে। দেশটিতে লকডাউন আরো তিন সপ্তাহ থাকবে।

এদিকে ব্রিটেনে করোনা ভাইরাস বিস্তারের পেছনে হিন্দু গোষ্ঠী ইসকনের (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) পরোক্ষ ভূমিকা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ কিছুদিন ধরে নানারকম আলোচনা-সমালোচনার পর ঐ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে মার্চে এক সমাবেশে যোগ দেওয়া তাদের পাঁচ জন সদস্য করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত অন্তত ২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

ইউরোপ নিয়ে সতর্ক বার্তা হুর

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সতর্ক করেছে, ইউরোপের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে ইউরোপিয়ান রিসার্চ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাউরো ফেরারি পদত্যাগ করেছেন। তিনি ইইউভুক্ত দেশগুলোর করোনা ভাইরাস নিয়ে পদক্ষেপে হতাশ বলে জানিয়েছেন। 

স্পেনে টানা চার দিন মৃত্যু কমার পর গত দুই দিন আবার বেড়েছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় স্পেনে ৭২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ৭৪৩ জনের মৃত্যু হয়। প্রতিদিন ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে মৃত্যু বাড়ছে। দেশটিতে ১৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইতালিতে ১৭ হাজার ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। -ডেইলি মেইল, আল-জাজিরা ও সিএনএন

ইত্তেফাক/জেডএইচ