শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনায় মৃত্যুতে হঠাৎ উচ্চ লাফ

আপডেট : ০১ জুন ২০২০, ০১:০৯

দেশে করোনা ভাইরাসের উচ্চলাফ লক্ষ্য করা গেছে। টানা ৬৬ দিনের লকডাউন শেষে সব কিছু খোলার দিনে ভাইরাসটিতে সর্বোচ্চ মানুষের মৃত্যু ও আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫০ জন। আর এই সময়ে দেশের ৫২টি পরীক্ষাগারে ১১ হাজার ৮৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ৫৪৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এক দিনে আক্রান্তের এই সংখ্যাও সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ১৫৩ জন। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ড হচ্ছে প্রতিদিনই। এমনিতে লকডাউন ঠিকভাবে করা যায়নি, যে কারণে ভাইরাস এখন ৬৪ জেলায়ই ছড়িয়ে পড়েছে। তার ওপর লকডাউন শিথিল হওয়ায় সামনে কঠিন বিপর্যয় নেমে আসবে। তখন কঠোর লকডাউনের বিকল্প থাকবে না। লকডাউন শিথিলে করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

 

গতকাল থেকে অফিস খুলেছে, বাস-লঞ্চ, ট্রেন-বিমান চলছে, খুলছে পুঁজিবাজার, ব্যাংকে লেনদেন হচ্ছে আগের মতোই। দোকান-পাট তো ঈদের আগেই খুলেছিল। কিন্তু কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। মে মাসে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ হাজার ৯৫৪ জন। মারা গেছেন ৪৭৪ জন। ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে এভাবে সব খুলে দেওয়ায় বড়ো ধরনের বিপর্যয় আসন্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, লকডাউনের সময়ই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। এখন লকডাউন শিথিল হওয়ায় কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সাত দিন দেখে যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে কঠোর লকডাউনে যাওয়ার বিকল্প নেই। তখন মানুষকে লকডাউন মানতে বাধ্য করতে হবে।

 

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. খান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, যার জীবন তাকেই রক্ষা হবে। অর্থাত্ সবারই নিজের স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। আর আল্লাহ ছাড়া রক্ষা করার কোনো উপায় নেই।

 

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) এপিডেমিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শফিকুল হালিম বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈজ্ঞানিক বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে আমরা অবৈজ্ঞানিক বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এ কারণে পরিস্থিতি বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। সামনে আরো বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

 

গত ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে, ১৮ মার্চ আসে প্রথম মৃত্যুর খবর। নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা রবিবার দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরে বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন আরো ৪০৬ জন। সব মিলে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৭৮১ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনার সুস্থতার হার ২০ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। নতুন যুক্ত দুটিসহ মোট ৫২টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, করোনা ভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ২২৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৩০টি। নতুন যে ৪০ জন যারা মারা গেছেন, তাদের ৩৩ জন পুরুষ এবং সাত জন নারী। বয়সের দিক থেকে ২১ থেকে ৩০ বছরের একজন, ত্রিশোর্ধ্ব পাঁচ জন, চল্লিশোর্ধ্ব ১১ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব আট জন, ষাটোর্ধ্ব ১১ জন এবং সত্তরোর্ধ্ব চার জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে আট জন, খুলনা বিভাগে দুই জন, রাজশাহী বিভাগে একজন এবং রংপুর বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

 

গত শনিবারের বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ জন মারা গেছেন। যা এক দিনে যৌথভাবে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ৯ হাজার ৯৮৭টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরো ১ হাজার ৭৬৪ জনের দেহে। সেই হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু এবং রোগী শনাক্ত বেড়ে হয়েছে রেকর্ড।

 

ইত্তেফাক/এএম