বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনায় এক লাফে দ্বিগুণ মৃত্যু

আপডেট : ০১ জুলাই ২০২০, ০১:৪৩

দেশে করোনা ভাইরাসের উচ্চ লাফ লক্ষ্য করা গেছে। এক লাফে মৃত্যু বেড়েছে দ্বিগুণ। গত কয়েক দিন মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪ থেকে ৪৫ জনের মধ্যে থাকলেও হঠাত্ করে গতকাল মঙ্গলবার ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। এতে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হলো ১ হাজার ৮৪৭ জন। গত ৩১ মে পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৯২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়মিত বুলেটিন থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে চলতি গত ১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫৫ জন। অর্থাত্ মোট মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে ৬৩ শতাংশই জুন মাসে। হঠাৎ করে একদিনে ৬৪ জনের মৃত্যুর খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১-৭ জুন ১৯৬, ৮-১৪ জুন ২৮৩, ১৫-২১ জুন ২৯৩ এবং সর্বশেষ ২২-৩০ জুন পর্যন্ত ৩৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোভিড-১৯ হাসপাতালে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, করোনায় চিকিৎসায় বড় ত্রুটি আছে। এ কারণে মৃত্যু বাড়ছে। তারা বলেন, করোনার চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে। চিকিত্সার ধরনও পরিবর্তন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, যেহেতু করোনার চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে, তাই চিকিৎসার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষ ও করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. খান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাসাবাড়িতে অক্সিজেন ব্যবহারে অনভিজ্ঞতা মৃত্যু বাড়ার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, অনেক রোগী বাসাবাড়িতে অক্সিজেন ব্যবহার করছেন। অথচ অক্সিজেন সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। কোন সময় কী পরিমাণ অক্সিজেন দিতে হবে, তা অনেকেই জানেন না।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও কমেছে আক্রান্তের সংখ্যা। পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা চার সহস্রাধিক হলেও গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৬৮২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এতে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩ জন। নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা মঙ্গলবার দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির এই সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন। আইইডিসিআরের অনুমিত হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও বাড়িতে থেকে চিকিত্সা নেওয়া রোগীদের মধ্যে আরো ১ হাজার ৮৪৪ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৫৯ হাজার ৬২৪ জনে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: পানির মধ্যে ওজু করে দোয়া-দরুদ পড়েছি

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ, তার ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। ১৮ জুন দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২০ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়ায়। ১০ জুন মৃতের সংখ্যা হাজারের ঘর পেরিয়ে যায়। মৃতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যায় ২২ জুন। এর আগে ১৬ জুন এক দিনে মোট ৫৩ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে। এত দিন সেটাই ছিল এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। গতকাল সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আর সোমবারের বুলেটিনে এক দিনে ৪ হাজার ১৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এখন পর্যন্ত সেটাই সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর প্রথম ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৮৭ দিনের মাথায়; এরপর তা লাখে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১৬ দিন। গত ৮ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত সময়ে করোনায় আক্রান্ত হন ২৭ জন, মারা যান দুই জন। ২৩ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্ত ৯৬ জন, মৃত্যু ১০ জন। ৭ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্ত ৩২৫৯ জন, মৃত্যু ৯৮ জন। ২২ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত আক্রান্ত ৮ হাজার ৩৩৭ জন, মৃত্যু ৭৬ জন। ৭ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত আক্রান্ত ১৬ হাজার ৭৯২ জন, মৃত্যু ২২২ জন। ২২ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত আক্রান্ত ৩১ হাজার ৮৮০ জন, মৃত্যু ৪০৩ জন, ৬ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত আক্রান্ত ৪১ হাজার ৯০১ জন, মৃত্যু ৫৩২ জন, ১৯ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আক্রান্ত ৩৯ হাজার ৯৩৮ জন, মৃত্যু ৪৫৯ জন।

ইত্তেফাক/এসি