বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মহামারির ছয় মাস করোনার টিকা কতদূর!

আপডেট : ০২ জুলাই ২০২০, ০১:৫৭

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর নতুন এক করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় চীন। এরপর গত ছয় মাসে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে। মাত্র ১৮০ দিনের ব্যবধানে বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখের বেশি মানুষ। আর মারা গেছে ৫ লাখ ৫ হাজার মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র, লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় এখন আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এই অবস্থায় মহামারি নির্মূলে একটি কার্যকর টিকার জন্য আশায় বুক বেঁধে আছে সারা বিশ্বের মানুষ।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, যত দ্রুত আবিষ্কারের কাজ হোক না কেন, ২০২১ সালের আগে এই টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সাধারণত টিকা বা প্রতিষেধক তৈরির জন্য বেশ কয়েক বছর সময় লাগে কিন্তু নতুন মহামারির চাপে টিকা আবিষ্কারের ছয়টি পর্যায় কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ করার তোড়জোড় চলছে কোনো টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে সবার আগে গবেষকেরা ভাইরাসটি বিশ্লেষণ করেন তারপর ভাইরাসের উপাদান ও বাড়তি পদার্থ দিয়ে তারা সম্ভাব্য টিকা তৈরি করেন তৃতীয় পর্যায়ে পশুর ওপর সেই টিকা প্রয়োগ করা হয়? তারপর চতুর্থ পর্যায়ে মানুষের ওপর সেটি প্রয়োগ হয়? মানবদেহে পরীক্ষার পর প্রথমেই সেটা নিরাপদ কি না, দেখতে হয় ? তারপর দেখতে হয় শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কি না এবং সেটা ঠিকঠাক কাজ করছে কি না। অবশেষে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে ব্যাপক হারে বাণিজ্যিক উত্পাদন শুরু হয়? সেখানেও পার হতে হয় নানা ধাপ?

নতুন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকেই নানা দেশ ও সংস্থা নানাভাবে টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে? এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিত্সক, গবেষক ও ওষুধ কোম্পানিগুলো টিকা আবিষ্কারে ১৪০টির বেশি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। কেউ ইনঅ্যাক্টিভ ভ্যাকসিন, কেউ লাইভ ভ্যাকসিন আবার কেউ ডিএনএ ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে। এর মধ্যে মানবদেহে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়েছে ১৮টি। ইতিমধ্যে মানবদেহে পরীক্ষা পর্যন্ত ?শুরু হয়ে গেছে?

টিকা আবিষ্কারের পথে এগিয়ে অক্সফোর্ড ও মডার্না

কোভিড-১৯-এর টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আলোচনা সৃষ্টি করেছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও বায়ো ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রা জেনেকা। ইতিমধ্যে তারা এই টিকা মানবদেহে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদনের জন্য একাধিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিও শেষ হয়েছে। কিন্তু সব পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করার পর তা কবে বাজারে আসবে তার নির্দিষ্ট সময়সীমা জানানো হয়নি।

অক্সফোর্ডের পরই মার্কিন সংস্থা ‘মডার্না আইএনসি’র তৈরি এমআরএনএ-১২৭৩ ভ্যাকিসন এগিয়ে আছে। এই টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে চলতি জুলাই মাসেই। বাণিজ্যিক উত্পাদনের পথে এগোচ্ছে মডার্নাও। ইতিমধ্যে তারা ক্যাটালেনট কোম্পানির সঙ্গে মিলে প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে।

সিঙ্গাপুরের ডিউক-এনইউএস মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকেরা একটি টিকা আবিষ্কারের পথে রয়েছেন। এই টিকা ইমিউনিটি তৈরি করবে, আবার সংক্রমিত রোগীদের চিকিত্সায় সরাসরি ব্যবহার করা যাবে। এই টিকার পরীক্ষা আগামী আগস্টে শুরু হবে।

ইতিমধ্যে এডি৫-এনকভ নামে করোনা ভাইরাসের একটি টিকা চীনের সেনাবাহিনীতে প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যদিও এই টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা হয়নি।

অন্যদিকে, চলতি জুলাই মাসে ভারত জুড়ে শুরু হতে চলেছে কোভিড-১৯ টিকার মানবদেহে পরীক্ষা। এই কোভ্যাক্সিন নামের টিকার প্রথম পর্যায় ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মানুষের দেহে পরীক্ষার জন্য ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেলকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইসিএমআরের (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ) সহযোগিতায় হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেকের তৈরি করা কোভ্যাক্সিন একটি নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিন, যা সংক্রামক সারস-কভ-২ ভাইরাসের স্ট্রেন থেকে তৈরি। গবেষণায় এই ভ্যাকসিন সুরক্ষা ও কার্যকর প্রতিরোধে যথেষ্ট প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে।

টিকা পাওয়া যাবে কবে?

বিশ্বে প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সবার মুখে একটিই প্রশ্ন, কবে আসবে এর টিকা? সার্বিক দিক বিবেচনা করে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ২০২১ ?সালের আগে করোনা ভাইরাসের টিকা বাজারে আসার সম্ভাবনা নেই? যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউচি চলতি সপ্তাহে মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২১ সালের প্রথম দিকে করোনা টিকার লাখ লাখ ডোজ প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এর আগে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এছাড়া একই সময়ে বাজারে কয়েকটি টিকা পাওয়া যেতে পারে, যে কারণে করোনা নির্মূলে সবাই একই টিকা পাবে এমনটা বলা কঠিন।

কিছু বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলছেন, এত প্রচেষ্টার পর একটি কার্যকর টিকা পাওয়া যাবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর কার্যকর টিকা আবিষ্কার না হলে এই ভাইরাস ফিরে ফিরে আসবে।

ইত্তেফাক/বিএএফ