শাস্ত্রীয় সংগীতের সুরে বর্ষাবন্দনা করলেন শিল্পীরা। ভারতীয় হাইকমিশন, ঢাকার উদ্যোগে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে ঢাকায় বসেছে দুই দিনের মালহার ফেস্টিভ্যাল। ভারত ও বাংলাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের স্বনামধন্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে শুরু হয়েছে দুই দিনের এ উৎসব।
গতকাল শুক্রবার ভারতের শিল্পীরা গানে ও বাদনে করলেন বর্ষা আবাহন। মালহার বা মল্লার হচ্ছে বর্ষার রাগ। এই রাগ দিয়ে বৃষ্টিকে পৃথিবীর বুকে বরণ করে নেন শিল্পীরা। মালহারের যত প্রকার আছে তার মধ্যে মিয়া-কি-মালহার উল্লেখযোগ্য। মিয়া মালহার রাগ অবলম্বনে গান বেঁধেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গজল ও ভজনেও ব্যবহূত হয়েছে এই রাগ।
শাস্ত্রীয় সংগীতের এ আসরে গতকাল ভারতের স্বনামধন্য ওস্তাদ ও শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। শুরুতেই কণ্ঠসংগীত নিয়ে আসেন শায়নি সিন্ধে। তিনি পরিবেশন করেন রাগ মিয়া কি মালহার। ছয় বছর বয়সে শাস্ত্রীয় সংগীতে হাতেখড়ি হওয়া শিল্পী শাওনি সিন্ধে শুরুতেই বিলম্বিত এক তালে পরিবেশন করেন খেয়াল। এরপর ত্রিতালে মধ্যলয়ে পরিবেশন করেন ঠুমরি। সবশেষে আবারও বিলম্বিত একতালে কণ্ঠে শোনান ‘সহেলি সাঁঝ ভইলি’।
এরপর সেতারবাদনে ছিলেন পণ্ডিত কুশল দাস। তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন পণ্ডিত শুভংকর ব্যানার্জি। কুশল দাসও সেতারে বাজিয়ে শোনান বর্ষার রাগ।
অনুষ্ঠানে এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন ও জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোলজ প্রমুখ। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাস সবাইকে স্বাগত জানান।
আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বসবে দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। এতে সংগীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের শিল্পী প্রিয়াংকা গোপ এবং ভারতের শিল্পী পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোস তার সঙ্গে তবলায় সংগত করবেন শুভংকর ব্যানার্জি।
এরপর রবিবার খুলনায় অনুষ্ঠিত হবে এই ‘মালহার উৎসব’। মহানগরীর নতুন বাজার সিএসএস আভা সেন্টারে সন্ধ্যায় বসবে এ আয়োজন।
রবিঠাকুরের গানে গানে ‘বর্ষামঙ্গল’
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একগুচ্ছ বর্ষার গানে মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপহার দিল রবিরাগ। ‘বর্ষামঙ্গল’ শিরোনামে এই মনোজ্ঞ সন্ধ্যাটি বসেছিল শুক্রবার রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে। সাদি মহম্মদের গ্রন্থনা, পরিকল্পনা ও পরিচালনায় অনুষ্ঠানটি সাজানো হয় একক, দ্বৈত ও সমবেত গান দিয়ে। বিশেষ আকর্ষণ ছিল রবীন্দ্রনাথের বর্ষাবিষয়ক গানের সঙ্গে শামীম আরা নীপার পরিচালনায় নৃত্যাঞ্চল শিল্পীদের মুগ্ধতা ছড়ানো নাচ।
এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত এই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের বর্ষাবিষয়ক একক গান পরিবেশন করেন : আমিনা আহমেদ, সাদি মহম্মদ, সন্ধ্যা ভট্টাচার্য, শামা আলী, গোলাম হায়দার, মাখন হাওলাদার, এণাক্ষী সাহা রায়, পারভীন ইয়াসমিন, নাজনীন সুলতানা, রমা বাড়ৈ, নিরুপম শর্মা, প্রমোদ রঞ্জন রায়, মোস্তফা কামাল সুজন, চন্দন কুমার দে, মৈয়েত্রী চক্রবর্তী রায় ও রণজিত্ রায়।
উদীচীর রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত স্মরণ
বাংলা সাহিত্যের তিন মহিরুহ—বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং সাম্যবাদের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গতকাল শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠান শুরু হয় ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন দিয়ে।
ইত্তেফাক/কেকে