শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রয়োজনের তুলনায় অভিবাসীর সংখ্যা নগণ্য!

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:০০

বিশ্বব্যাপী অভিবাসনবিরোধীদের সংখ্যাটা যে ক্রমবর্ধমান, সে কথা নতুন করে বলার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হয় না। পোল্যান্ড থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রে পর্যন্ত, রাজনীতিবিদরা সীমান্ত বন্ধ করছেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন শরণার্থীদের কাছ থেকে। অন্যদিকে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা, এ দুটির কোনোটিতেই খুব বেশি অভিবাসী বিদ্যমান তো নেই-ই উপরন্তু বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক অভিবাসী প্রয়োজন। অন্তত তথ্য এবং উপাত্ত জোর দিয়েই বলে যাচ্ছে এমন কথা। কম থেকে আরো কম সন্তান নিতে থাকার কারণে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার জনগণ তাদের ধরন ও সংখ্যার প্রশ্ন আগামী কয়েক দশক পর্যন্ত অবলোকন করবে প্রবীণত্ব ও অধঃপতন। এই ধারাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও গতিশীলতা। প্রত্যেক অবসরভোগী রেখে যাবে প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম সংখ্যক শ্রমিক।

আজ ইউরোপে গড়ে নারীর শিশুসংখ্যা হচ্ছে ১.৬, আর উত্তর আমেরিকায় সেটি ১.৯। কিন্তু দুটিই জনসংখ্যাকে স্থিতিশীল রাখার সংখ্যার চেয়ে অনেক কম। প্রাক্কলন করা হয়েছে জাপানসহ ইউরোপের দশটি দেশ দেখবে ২০৫০ সাল নাগাদ তাদের মোট জনসংখ্যা বর্তমানের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। ধারণা করা হচ্ছে আগামী ৬৫ বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যা এখনকার চেয়ে ৪৪.৫ মিলিয়ন কমে যাবে। এবং জনসংখ্যা সংকোচনের সঙ্গে সঙ্গে তারা গ্রহণ করবে প্রবীণতাবিশিষ্টের উপাধি। ইউরোপে এরই মধ্যে এক-চতুর্থাংশ জনসংখ্যার বয়স ৬০ অতিক্রম করেছে। ২০৫০ সাল নাগাদ এই অনুপাত দাঁড়াবে এক-তৃতীয়াংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় ২০৮০ সালে অবসর জীবনযাপনকারীর মোট সংখ্যাটা থাকবে বর্তমানের চেয়ে ৫৩.৩ মিলিয়ন বেশি। তখন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা অবশ্য এতটা খারাপ হবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ রাজ্যই দেখেছে যে, ২০০৭ থেকে ২০১৭ এ সময়ে কর্মক্ষম জনসংখ্যার রেখাটা নামতির দিকে।
 
বার্ধক্যগ্রস্ত জনসংখ্যা সংগত কারণেই কল্যাণ ব্যবস্থাকে ঠেলে দেবে নাজুক অবস্থায়। স্পেনের দিকে তাকালেই বিষয়টি খুবই পরিষ্কার হয়ে যায়। ২০০৪ থেকে ২০৫০, এ সময়ে স্পেনকে স্বাস্থ্যসেবা, বৃদ্ধসেবা ও পেনশনের পেছনে খরচ করতে হবে জিডিপির ১০ শতাংশ। বার্ধক্যগ্রস্ত জনসংখ্যা ক্ষতি সাধন করে অর্থনৈতিক গতিশীলতারও।

যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির ক্ষতি এখন পর্যন্ত সীমিত থাকার যে কারণটি চিহ্নিত, সেটি হচ্ছে প্রধান ভূরাজনৈতিক শত্রুরা তাদের চেয়ে আরো বেশি মারাত্মক জনসংখ্যা সমস্যা মোকাবিলা করছে। অতীতকে বাদ দিয়ে ভবিষ্যতের কথা ভাবলে বলতেই হয়, জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধি ও শিক্ষাস্তরের উন্নয়ন ঘটিয়ে নতুন কোনো দেশ মহাশক্তির সম্মান অর্জন করে নিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভবিষ্যত্ ভূরাজনৈতিক বিশ্বকে সামনে রেখে জনতাত্ত্বিকরা তাদের ইঙ্গিত উপস্থাপন করে। ওয়াশিংটনের কীভাবে প্রস্তুত হওয়া উচিত, সে ইশারাও দেওয়া রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তীক্ষ্নতা কব্জায় রাখতে আমেরিকার নেতাদের উচিত চলমান নেতিবাচক জনসংখ্যাগত ধারাকে ধীর করা অথবা পুরোপুরিই উলটে দেওয়া, যা এখন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির ভিত্তিকেই নড়বড়ে করে দিচ্ছে। কিন্তু চলমান ধারাকে ইতিবাচক বা সম্পূর্ণ বিপরীতমধর্মী করে তোলার রাস্তাটা বড্ড কঠিন। তার চেয়ে অনেক সহজ শরণার্থীদের প্রতি সহূদয় হয়ে তাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় নীতি পালটিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধি বজায় রাখা

—ব্লুমবার্গ অনুসরণে