শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দিনে ৯০০০ কর্মঘণ্টা নষ্ট, হাঁটার গতি ও গাড়ির গতি প্রায় সমান

আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:৫০

রাজধানীতে যানজটের ফলে অর্থনীতির যে ক্ষতি হচ্ছে তার পরিমাণ বছরে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে ৪২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের হিসাব বলছে, দেশের অর্থনীতির ৩৬ শতাংশ এই ঢাকা কেন্দ্রিক। কিন্তু প্রতিদিনের যানজটের কারণে সাধারণ মানুষের ৯ হাজার কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় চলাচলরত যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে মাত্র ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার। অথচ হেঁটেই পথ চলা যায় ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা মহানগরকে বাসযোগ্য, সমৃদ্ধ এবং প্রাণবন্ত মেগাসিটিতে রূপান্তর বিষয়ে এক সেমিনারের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক। এতে বিভিন্ন সেশনে অংশ নেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম, ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টিমবন, রাজউক চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান। সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

সেমিনারের শুরুতে বিশ্বব্যাংকের পরিচালক জন রোম তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে ঢাকা বিশ্বের চতুর্থ দূষণের নগরিতে পরিণত হয়েছে। বাসযোগ্যতার বিচারে ঢাকা এখন দামেস্ক এবং লাগোসের পরেই অবস্থান করছে। এই শহরে প্রতিদিন ৬ হাজার টন গৃহস্থলি বর্জ্য তৈরি হয়, যার মধ্যে ৪ হাজার টন সংগ্রহ করা হয়। মাত্র ৩-৪ শতাংশ জলীয় বর্জ্য শোধন করা সম্ভব হয়। তবে এই শহরের যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে সেটি এখনো পুরোপুরি ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। ঢাকাকে আধুনিক মেগাসিটিতে রূপান্তর করতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পনা ছাড়াই ঢাকার উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ঢাকার উন্নয়নের জন্য একটি গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। কী পরিমাণ ক্ষতি ইতিমধ্যে হয়েছে সেটি নিরূপণ করে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে এগুতে হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম বলেন, বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর আমরা জরিপ করে দেখেছি রাজধানীর ৬৬ শতাংশ বাড়ি নির্মিত হয়েছে নকশা বহির্ভূতভাবে। আমরা এগুলোর তালিকা তৈরি করে নোটিস পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, ১৮১৮টি বহুতল ভবন পাওয়া গেছে, যেগুলো নকশা-বহির্ভূতভাবে তৈরি করা হয়েছে। অনেকগুলোর নকশাই নেই। এগুলোর মালিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালীরা। রাজউককে বলা হয়েছে সংশোধনের জন্য এগুলোকে নোটিশ দিতে। ইতিমধ্যে দুদককে এসব বিষয়ে জানানো হয়েছে। আমরা দুর্নীতিকে ছাড় দিচ্ছি না। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রের পূর্ত কাজে দুর্নীতিতে জড়িত ৩৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান বলে জানান তিনি।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টিমবন বলেন, বিশ্বব্যাংক বলছে না রাতারাতি অবৈধ ভবন ভেঙে ফেলতে হবে। অপরিকল্পিত নগরকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করতে হবে। তবে এর জন্য এখনই পদক্ষেপ শুরু করতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই ঢাকার উন্নয়ন করতে হবে।

গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী শহরগুলোকে নিয়ে একত্রে মাস্টার প্লান তৈরি করে এগোতে হবে। তাছাড়া শহরের ওপর দিয়ে বাইপাসের মাধ্যমে আন্তঃজেলায় যাতায়াত ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন: ব্রিটেনের নির্বাচনে লড়ছেন ৯ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ

নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভি অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন সংস্থা সিটি করপোরেশনে কাজ করছে। সরকার সার্কুলার দিয়ে বলেছে, সিটি মেয়র হবেন এর প্রধান সমন্বয়ক। সমন্বয়ের বৈঠক ডাকা হলে কেউ সাড়া দেয় না। মেয়রের ডাকে অনেক সময় ডিসি, ম্যজিস্ট্রেট এমনকি পুলিশও আসে না। রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য ড্যাপ করা হয়েছে কিন্তু কেউ মানছে না। বলা হচ্ছে জলবায়ু রক্ষা করতে হবে, কিন্তু জেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের নদীর অংশ ইজারা দিচ্ছে। তিনি বলেন, সিটি গভর্নেন্স না থাকলে এই সমন্বিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।

ইত্তেফাক/নূহু