বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অর্থনীতির অস্বস্তি বাণিজ্য  ঘাটতি

আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:১৪

একটি দেশের সাফল্য-ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে সে দেশের অর্থনীতির ভিত্তি কতটা শক্ত তার ওপর। আর বৈদেশিক বাণিজ্য অর্থনীতির সে ভিত্তিকে শক্ত করার কাজটি করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে খুব বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি আমাদের অর্থনীতিতে একটি স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। আমরা আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানোর রেমিট্যান্সও পর্যাপ্ত পরিমাণে আসছে না। এতে অর্থনীতির জন্য অস্বস্তিদায়ক বাণিজ্য ঘাটতির অশুভ চক্র থেকে দেশের অর্থনীতি কোনোভাবেই মুক্তি পাচ্ছে না। বরং দিন দিন এ সমস্যা আরো ঘনীভূত হচ্ছে।

বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, আমদানি খাতে ব্যয় বাড়ার কারণে রপ্তানি আয় বাড়লেও বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। তবে এবার একটু ভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আমদানি ব্যয় কমেছে। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ও কমে গেছে। এতে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬২ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৫৩২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে মোট ১ হাজার ৮১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ। আর পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে ১ হাজার ২৫১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। তথ্যে দেখা যায়, এই চার মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

অর্থনীতিতে বাণিজ্য ঘাটতির অস্বস্তি দূর করতে যেসব উদ্যোগ নিতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ানোর ব্যবস্থা করা। অবশ্য গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় এফডিআইয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশে ১৫৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছিল। চলতি বছরের একই সময়ে এসেছে ১৬৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এফডিআই প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। এই চার মাসে বাংলাদেশে নিট এফডিআই এসেছে ৮৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আগের বছরে একই মাসে এসেছিল ৮৪ কোটি ১০ লাখ ডলার।

একই সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো অন্যতম আরেকটি অনুষজ্ঞ হলো আমদানি কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য দেশে মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল প্রভৃতি সামগ্রীর আমদানি বিকল্প বের করতে হবে। ফলে তখন যেসব সামগ্রী দেশে তৈরি করা এখনই সম্ভব হচ্ছে না এমন পণ্য আমদানি করতে হবে। তাতে আমদানি খরচ কমে আসবে।

অন্যদিকে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে। সরকারি-বেসরকারিভাবে দীর্ঘদিন ধরেই বলা হচ্ছে এক পণ্য বা কয়েকটি পণ্য নির্ভরতা থেকে রপ্তানি বাণিজ্য বেশি দিন সুফল পাবে না। তবে এক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগের যথেষ্ট অভাব দেখা যায়। রপ্তানি গন্তব্য বাড়ানোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রেও কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে।

বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়ে। তবে অর্থনীতির চাপ মুক্ত করার জন্য রেমিট্যান্স আয় বড়ো ভূমিকা রাখে। কারণ রপ্তানির মতো রেমিট্যান্সও দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যম। দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ যত বাড়বে আমাদের অর্থনীতি তত বেশি চাঙ্গা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতি বছরই রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৪২ কোটি (১৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের চার মাসেই আগের অর্থবছরের একই মাসগুলোর তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রেমিট্যান্স এসেছে ৬১৫ কোটি ডলার।

বিশ্বের শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। আর জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশ পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম। রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য আরো অনেক কিছু করার রয়েছে। দেশের বেকার তরুণদের জনশক্তিতে রূপান্তর করার জন্য নতুন নতুন শ্রম বাজার খুঁজে বের করতে হবে। আর আমাদের যেসব বাজার রয়েছেন সেসব দেশে আরো প্রশিক্ষিত করে লোকবল পাঠাতে হবে। দেশের তরুণ-তরুণীদেরকে আধুনিক কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ ভোগ করছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ তরুণ। তরুণরা নানা কাজে লাগতে পারে। তাদের শ্রমকে যথাযথভাবে সরকার যদি কাজে লাগাতে পারে তাহলে তা দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।

ইত্তেফাক/কেকে