শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সরল ও এক অঙ্কের সুদের নতুন যুগে ব্যাংকিং খাত

আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৩:২৩

অবশেষে সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কের সুদ হার কার্যকর হচ্ছে। একই সঙ্গে সেই ‘কাবুলিওয়ালা’ যুগের দণ্ডসুদ কিংবা চক্রবৃদ্ধি সুদ গণনার পদ্ধতিও বাতিল হয়ে যাচ্ছে। আগামী ১ জানুয়ারি ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণের সরল সুদ ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে নতুন যুগে পদার্পণ করবে ব্যাংকিং খাত। এর আগে বাংলাদেশে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনে (এইচবিএফসি) সরল সুদ চালু থাকলেও শিল্প তথা উত্পাদনমুখী খাতের জন্য সুযোগটি ছিল না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হচ্ছে। ঘনবসতিপূর্ণ এবং বহুল বেকারত্বের এই দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে শিল্প ও কর্মসংস্থানমুখী খাতের প্রসার জরুরি। কিন্তু উচ্চ সুদ হারের কারণে এদেশে শিল্পখাত বিকশিত হতে পারেনি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সুদ হার প্রয়োগ হয়ে আসছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে। পাশাপাশি চক্রবৃদ্ধি সুদ হার বা কম্পাউন্ড রেট থাকায় রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায়ও পিছিয়ে পড়ছিল বাংলাদেশ। ব্যবসায় লোকসান গুনে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে পারেননি উদ্যোক্তারা। ফলে, বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণও। বিশেষত অনিচ্ছাকৃত খেলাপিচক্রে পড়ে গেছেন সত্ ও প্রকৃত উদ্যোক্তাদের অনেকেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরল সুদ হার কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারাও। তাদের মতে, সুদের ওপর সুদ, দণ্ড সুদ আরোপ করায় এক সময় হতাশ হয়ে কলকারখানার চাকা বন্ধ করে দিতে হয়। একইভাবে ব্যাংকের কিস্তি প্রদানও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সরল সুদ হার গণনা করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই সরল সুদ হার চালুর ঘোষণায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। পাশাপাশি সিঙ্গেল ডিজিট জ্বালানি সংকটের এই দিনেও উদ্যোক্তাদের অনেকটা পরিত্রাণ দেবে।

এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রীর নেওয়া কিছু পদক্ষেপও প্রশংসিত হয়েছে। এর আগে যারা কষ্ট করে ব্যাংকের কিস্তি দিতেন, তাদের জন্য কোনো প্রণোদনাও ছিল না। অথচ ইচ্ছেকৃত খেলাপি কিংবা প্রভাবশালীরা সুদ মওকুফসহ নানা সুবিধা আদায় করে নিতেন। বিষয়টি দৈনিক ইত্তেফাকে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে নজরে আনলে ভালো গ্রহীতাদের জন্য ১০ শতাংশ রিবেট প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: পেঁয়াজ আমদানির নতুন আইপি হচ্ছে না

এদিকে, সিম্পল ও সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হারের বিনিময়ে ব্যাংকগুলো বেশ কিছু সুবিধা সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিলেও নানা ফন্দিফিকির খুঁজছে। তারা নির্দেশনা মানলেও সার্ভিস চার্জ বাড়ানো এবং প্রসেসিং বৃদ্ধির মাধ্যমে ঋণের খরচ বাড়ানোর ফন্দি করছে বলে ব্যাংকিং সূত্র জানায়। এই সূত্র মতে, ব্যাংকে মালিক ও এমডিদের পৃথক পৃথক সংগঠন সক্রিয় থাকায় নানা ফন্দিফিকিরের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি অর্থ হাতিয়ে নিতেই যত পরিকল্পনা করে থাকে। ফলে, ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়ে যায়। এখনো তারা নানা অযৌক্তিক চার্জ আরোপ, প্রসেসিং ফি বাড়ানোর চিন্তা করছে। ঘুরেফিরে যাতে ডাবলডিজিট সুদ হয়ে যায়। অথচ আমানতের ক্ষেত্রে তারা কম সুদ দিচ্ছে এবং ১৩ মাসে বছর গণনা করে কোনো কোনো ব্যাংক আমানত নিয়ে গ্রাহকদের ঠকাচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়। এই সূত্র মতে, সঠিক মনিটরিং না করলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সুফল পাওয়া নিয়ে শংকা থেকেই যাবে। এমনিতেই ব্যাংকের ঋণ নিতে গেলে নানাভাবে অর্থ খরচ করতে হয়। আবেদন ফরম নেওয়া থেকে শুরু করে অযৌক্তিকভাবে কাগজপত্রাদি জমা এবং এগুলো যাচাই-বাছাইয়ে সেই সনাতনি কায়দা, আইনজীবীর মতামত নিতেই কম টাকা খরচ হয় না। ব্যাংকের নির্ধারিত আইনজীবীকে দিয়ে মূল্যায়ন করতে গেলে তাদের কিংবা ব্যাংকের নির্ধারিত হারেই টাকা দিতে হয়। উদাহরণ দিয়ে সূত্র জানায়—দেখা যায়, একজন গ্রাহকের জন্য মতামত লিখতে কম্পিউটারের কয়েকটি প্রিন্ট লাগে। কিন্তু নতুন একটি কার্টিজের দামও নেওয়া হয়। এভাবে নানা রকম চার্জে নাকাল ঋণগ্রহীতাদের স্বার্থ রক্ষায় মনিটরিং জরুরি বলে মনে করেন সূত্রগুলো।

ইত্তেফাক/এএএম