মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পেঁয়াজ আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার!

আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:৪৪

সাম্প্রতিক সংকটে আমদানিকৃত পেঁয়াজ অনেক বাড়তি দরে কিনতে হয়েছে ক্রেতাকে। অন্যদিকে আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে অর্থপাচারের খবরও বেরিয়ে আসছে। বিশেষত মিয়ানমার থেকে আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য কম দেখানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হলেও মূল্য দেখানো হয়েছে ৫০০ ডলার। অর্থাত্ প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানিতে ৭০০ ডলারের মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ মনে করছে, এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার হয়েছে। এটি কী প্রক্রিয়া ঘটেছে, কারা দায়ী, কী উদ্দেশ্যে করা হয়েছে—তা বিশদ পরীক্ষা করতে এনবিআরের কাছে অনুমতি চেয়েছে সংস্থাটি। গত সপ্তাহে এনবিআরে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।

নাম প্রকামে অনিচ্ছুক শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, মূল্য কম বা বেশি দেখানোর মাধ্যমে অর্থপাচার হতে পারে। অর্থপাচার সংক্রান্ত আইনেও এ বিষয়ে বলা আছে। বেশি দরে ক্রয় করে কম মূল্যে দেখানো পণ্যের মূল্য অবৈধ উপায়ে (বিশেষত হুন্ডি) পরিশোধ করা হয়ে থাকতে পারে। আমরা প্রাথমিক তথ্যে জেনেছি প্রতি মেট্রিক টনে ৭০০ ডলার কম মূল্য দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য এনবিআরের কাছে অনুমতি চেয়েছি। অনুমতি পাওয়া গেলে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরের কাস্টমস বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত আগস্ট থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারত, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ থেকে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮০৬ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে আমদানির পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের প্রতি মেট্রিক টনে ৭০০ ডলারের সমপরিমাণ মূল্য কম দেখানো হয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ মনে করছে, এতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ডলার বা ২০০ কোটি টাকার ওপরে মূল্য কম দেখানো হয়েছে। এসব অর্থ হুন্ডি বা অন্য কোনো উপায়ে পাচার হয়ে থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: এবার আন্দোলনকারীদের গুলি করার ফুটেজ দেখালো পুলিশ

অবশ্য মিয়ানমারের মতো দেশ থেকে বেশি দরে ক্রয় করে কম দাম দেখানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। এনবিআরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, অনেক সময় শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য বেশি দরে আমদানি করা হলেও কম মূল্য দেখানো হয়। কিন্তু পেঁয়াজ আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই। আবার সংশ্লিষ্ট দেশটি যদি বিদেশিদের জন্য ব্যবসা কিংবা আবাসনের জন্য সুবিধাজনক হয়, সে ক্ষেত্রে অর্থপাচারের ঘটনা ঘটতে পারে। মিয়ানমার বাংলাদেশিদের জন্য আকর্ষণীয় কোনো গন্তব্য নয়। সেই বিবেচনায়ও সেখানে বেশি মূল্যে ক্রয় করে কম মূল্য দেখানোর যৌক্তিকতা প্রশ্নসাপেক্ষ। অবশ্য বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকের সুদ কিংবা চার্জের একটি বিষয় থাকে। এটি এড়ানোর জন্য কম মূল্য দেখানো হতে পারে। আবার তৃতীয় কোনো দেশে লেনেদেনের অর্থ পরিশোধ কিংবা পাচারের বিষয়টিও এখানে জড়িত থাকতে পারে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য আলী আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, প্রকৃতপক্ষে বেশি দরে ক্রয় করে কম মূল্য ঘোষণা করা হলে ঐ অর্থ অবৈধ উপায়েই পাঠাতে হবে। অবৈধভাবে অর্থ পাঠানো অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত। তবে ইস্যুটি বিশদ ও নির্মোহভাবে তদন্ত করা উচিত। শুল্ক গোয়েন্দার কাছে এমন কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকলে নিশ্চয়ই প্রমাণ করার সুযোগ থাকা দরকার।

ইত্তেফাক/বিএএফ