শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

১২ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৩৫

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। একদিকে সরকারি খাতে বেশি ঋণ যাচ্ছে, অন্যদিকে আগে বিতরণ হওয়া ঋণ আদায় হচ্ছে না। এতে ওই সব খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনও রাখতে হচ্ছে। তাতে মূলধন ঘাটতিতে পড়ছে ব্যাংক। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না।

অবশ্য খেলাপি ঋণ কমাতে দেদার ঋণ পুনঃতপশিল করছে বেশির ভাগ ব্যাংক। এর পরও তা না কমে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এর প্রভাবে মূলধন ঘাটতি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে ১২টি ব্যাংক। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ হিসাবের তিন মাস আগেও ব্যাংকিং খাতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার কম মূলধন ঘাটতি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকিং খাতে বড়ো সমস্যা খেলাপি ঋণ। আর খেলাপি ঋণের কারণেই মূলধন ঘাটতিও বাড়ছে। বেসরকারি ব্যাংকে ঘাটতি বেশি না হলেও সরকারি খাতে ঘাটতি অনেক বেশি। সরকারি ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের ঘাটতি পূরণ করা হয় জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে, যা মোটেও উচিত নয়। এটি বন্ধ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। তিন মাস আগে (জুন শেষে) মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বেড়েছে। খেলাপি ঋণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই মূলধন ঘাটতি বাড়ে। ১২টি ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের মূলধন ঘাটতি থাকলেও কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাখতে সক্ষম হয়েছে।

মূলধন ঘাটতির তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাতটি সরকারি মালিকানার। বাকি তিনটি বেসরকারি খাতের এবং একটি বিদেশি খাতের। সরকারি ব্যাংকের দক্ষতা না বাড়িয়ে জনগণের করের টাকায় বারবার মূলধন জোগান নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছর থেকে সরকারি ব্যাংকের আর কোনো মূলধন জোগান দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

মূলধন ঘাটতিতে থাকা সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সোনালী ব্যাংকের। বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। এছাড়া জনতা ব্যাংকের ৯৩৩ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৭৮৮ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৫৪৬ কোটি এবং বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৫৬২ কোটি টাকা। বেসরকারি চারটি ব্যাংক মিলে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের মূলধন ঘাটতি রয়েছে ৫৯ কোটি টাকা। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৭০১ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডার বা মালিকদের জোগান দেওয়া অর্থই মূলধন হিসেবে বিবেচিত। সারা বিশ্বে ব্যাসেল কমিটি প্রণীত আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে একটি ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনেক দিন ধরেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরছে না। উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগে আসছেন না। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেকেই শিল্পকারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। আর ব্যাংকের বেশির ভাগ ঋণই যাচ্ছে সরকারের ঘরে। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাত ঋণ পাচ্ছে না। আবার আগে বিতরণ হওয়া ঋণের টাকাও ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংক। ফলে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।