শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চট্টগ্রামে বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটছে না

আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০২:০৫

নতুন বিনিয়োগে বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ নিতে কোনো সমস্যা নেই। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিল্পে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। তার পরও নতুন বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটছে না। কোনো কোনো শিল্পোদ্যোক্তা শিল্পের ইউনিট সম্প্রসারণ করছে। তবে নতুন করে শিল্পে বিনিয়োগ কমে গেছে।

কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি সূত্র জানায়, শিল্পে উপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমে আগে থেকে নতুন সংযোগ চালু ছিল। গত বছরের ১৫ মে থেকে স্থানীয় ভাবে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি শিল্পের নতুন সংযোগ অনুমোদন দিচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬২টি শিল্পের জন্য নতুন ও ৬৩টি শিল্পের সম্প্রসারণের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। অথচ ৭ শতাধিক শিল্পের সংযোগ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

গত ২০০৬-০৭ থেকে এলএনজি আসার আগ পর্যন্ত চট্টগ্রামে চরম গ্যাস সংকট বিরাজ করছিল। একপর্যায়ে শিল্পে নতুন সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। তখন শিল্পোদ্যোক্তারা বলেছিলেন গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় চট্টগ্রামে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকা পড়ে আছে। তারা শিল্পের জন্য মেশিনারি সরঞ্জাম আমদানি করে ফেলেছে। এতে চরম বেকায়দায় পড়েছে এসব বিনিয়োগকারী। তবে এলএনজি আসার পর গ্যাস সংকট কেটে গেছে। এরপর শিল্পে নতুন গ্যাস-সংযোগ উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু সংযোগ নিতে গ্রাহকদের তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

কয়েকজন শিল্পোদ্যোক্তা অভিযোগ করেন, ঘুষের ক্ষেত্র কাস্টমস। ঘুষ ছাড়া কিছুই হচ্ছে না। এতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ এম মাহাবুব চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ‘গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে নতুন বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। উত্পাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগে নানামুখী জটিলতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। ঘুষ ক্ষেত্র হচ্ছে কাস্টমস। বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় সর্বক্ষেত্রে ঘুষ দিতে হচ্ছে। ঘুষের টাকা ওপরে পর্যন্ত যাচ্ছে। ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধি ও উল্লিখিত কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করছে।’

বিএসআরএমের জেনারেল ম্যানেজার তপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘বিনিয়োগে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। পুঁজি সংকটে অনেকেই নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না।’ শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ী নেতা আনামুল হক ইকবাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘এখনো অনেক বিনিয়োগ আটকা পড়ে আছে। মেশিন আমদানি করেনি। অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের কারণে নতুন বিনিয়োগে যেতে সাহস করতে পারছে না। যাদের কারখানা চালু রয়েছে তারা পুরোপুরি লোড নিতে পারছে না।’

আরও পড়ুন: কাল মধ্যরাত থেকে ঢাকায় বিশেষ অভিযান

বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ‘নতুন বিনিয়োগ অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দাভাবের কারণে অনেকেই ঝুঁকি নিচ্ছে না। টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। সব মিলিয়ে নতুন বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে।’

কর্ণফুলী গ্যাস অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, শিল্পে নতুন সংযোগ প্রদান চালুর পর থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্পে নতুন সংযোগ নিয়েছে ৬২টি আর চালু শিল্পে ইউনিট সম্প্রসারণের জন্য নিয়েছে ৬৩টি। ক্যাপটিভ পাওয়ারে নতুন ৯টি ও সম্প্রসারণের জন্য ১৭টি। সিএনজিতে নতুন দুটি সম্প্রসারণে দুটি। বাণিজ্যিকে নতুন ৮৬টি ও সম্প্রসারণের জন্য ৭১টি।

নতুন বর্ধিত মূল্যে শিল্পে প্রতি ঘনমিটার ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৭০ পয়সা এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির জিএম (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিস) প্রকৌশলী সারওয়ার হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, ‘শুরুতে শিল্পে গ্যাস সংযোগের জন্য ব্যাপক আগ্রহ দেখেছিলাম। এখন নতুন সংযোগ বাস্তবায়ন আশানুরূপ হচ্ছে না। সাড়া একেবারে কম। সংযোগের প্রচুর মালামাল আমাদের মজুত রয়েছে। আমরা দ্রুত সংযোগের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’

ইত্তেফাক/এসি