শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ব্যবসায়ীদের ব্যাংক লেনদেনে নজর এনবিআরের

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৩:১৪

ব্যবসায়ীদের ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ফাঁকি ঠেকাতে ব্যাংক লেনদেনে নজর দিয়েছে রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রাথমিকভাবে অপেক্ষাকৃত বড়ো লেনদেন হয় এমন প্রতিষ্ঠানের গত পাঁচ বছরের ব্যাংক হিসাব সংগ্রহ করে নিরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি এনবিআরের আওতাধীন ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ থেকে ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে বছরে ১০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন কিংবা স্থিতি ছিল এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এসব তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট নিবন্ধন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা বিআইএন) রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হবে। বিআইএনধারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এনবিআরে জমা দেওয়া হিসাব বিবরণী পরীক্ষা করা হবে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান কিংবা মালিকের কর প্রদানের সঙ্গে এসব লেনদেনের পরিসংখ্যান সাযুজ্যপূর্ণ কি না, তা-ও নিরীক্ষা করা হবে। পর্যায়ক্রমে শতকোটি টাকার নিচে লেনদেন হওয়া ব্যবসায়ের তথ্যও নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট ফাঁকি বের হয়ে আসবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

অবশ্য ব্যাংক থেকে ঢালাও তথ্য চাওয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও একধরনের আতঙ্ক ও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ইত্তেফাককে বলেন, কারো বিষয়ে সন্দেহ থাকলে তথ্য চাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে সবার ব্যাংক লেনদেনের তথ্য নেওয়া হলে ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক ও অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রায় তিন বছর আগে এনবিআরের আয়কর বিভাগ থেকে করদাতাদের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য নেওয়ার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এটি কার্যকর হলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হতে পারে এবং এতে ব্যাংক আমানতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় পরবর্তী সময়ে ঐ অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসে এনবিআর। তবে এবার ভ্যাট বিভাগ ভিন্ন উপায়ে তা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সংস্থাটির উপপরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার স্বাক্ষরিত ঐ চিঠিতে ব্যাংকে যেসব গ্রাহকের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ কিংবা স্থিতি শতকোটি টাকার ওপরে, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের নাম, বিআইএন এবং টিআইএন থাকলে তা পাঠাতে বলা হয়। একই সঙ্গে আরজেএসসি (যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধক) নিবন্ধন নম্বর, আমদানি কিংবা রপ্তানি নিবন্ধন সনদ, ব্যবসায়ের ধরন এবং প্রতিষ্ঠানের ধরন সম্পর্কেও জানাতে বলা হয়। অবশ্য কিছু প্রতিষ্ঠানকে এ তালিকা থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা ও লিজিং কোম্পানি।

ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য পরীক্ষা করা হবে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন ও ভ্যাট প্রদানে স্বচ্ছতা আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার যে পরিমাণ ভ্যাট পাওয়ার কথা, প্রকৃতপক্ষে সরকারের ঘরে তা আসছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের শতকোটি টাকার ওপর লেনদেন থাকলেও ঐ সব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নম্বরই নেই। আবার যাদের নিবন্ধন রয়েছে, তাদেরও এনবিআরে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে প্রকৃত লেনদেন কিংবা মূল্য সংযোজনের অনেক ব্যবধান থাকে। এ প্রক্রিয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান ফাঁকি দিয়েছে। ব্যাংক হিসাব যাচাইয়ের ফলে এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠানের ফাঁকির তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছেন তারা।

ইত্তেফাক/বিএএফ