শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনাকালে দুর্বল অর্থনীতি

তবু আসছে বিশাল রাজস্বের লক্ষ্য

আপডেট : ২২ মে ২০২০, ১০:২১

করোনার পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি একরকম স্থবির। রাজস্ব আদায়েও এর ধাক্কা লেগেছে। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের আগেই দেশের রাজস্ব আদায়ের গতি কমতির দিকে ছিল। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তাও অনিশ্চিত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আগামীতে সরকারের রাজস্ব আদায় আরো কমতির দিকে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে যাচ্ছে সরকার। অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী অর্থবছর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা আসতে পারে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার।

চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সেই বিবেচনায় আগামী অর্থবছরের জন্য আলোচ্য লক্ষ্যমাত্রা বড়ো কোনো লক্ষ্যমাত্রা নয়। কিন্তু আদায়ের চিত্রের দিকে তাকালে পরিস্থিতি লক্ষ্যমাত্রা কতটা বড়ো—তা আঁচ করা যাবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতি মাসে গড়ে আদায় হয়েছে ১৮ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সেই বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ আদায় হতে পারে কমবেশি ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। শেষের মাসগুলোতে রাজস্ব আদায় বেশি হলেও এবার করোনার কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মাথায় রাখতে হবে।

ফলে ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার ওপর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলে আদায় করতে হবে ৫০ শতাংশ বেশি। অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এমনটিই মনে করছেন। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, শুধু করোনার পরিস্থিতি নয়, যে কোনো বাস্তবতায়ই এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।

সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায় কমতে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে তিন লাখ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সেই বিবেচনায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির (৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা) লক্ষ্যমাত্রা নিলে উদ্বেগ নেই। কিন্তু ৩ লাখ কোটি টাকা তো আদায় হচ্ছে না। বাস্তববতাকে বিবেচনায় নিয়ে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা উচিত বলে মত দেন তিনি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, বিশাল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া এবং পরবর্তীতে তা সংশোধন করে কমিয়ে আনা চিরাচরিত ‘প্রথা’ হয়ে গেছে। প্রত্যেক বছরই সংশোধন করে কমিয়ে আনা হচ্ছে। বছর শেষে দেখা যাচ্ছে, তাও আদায় হচ্ছে না। একই পরিস্থিতি দাঁড়াবে এবারও। সরকারকে মানতে হবে—ঘাটতি অর্থায়ন বাড়বে, করণীয় নেই। একই সঙ্গে যতদূর সম্ভব রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে।

আগামী ১১ জুন সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করে বাজেট নিয়ে তাদের প্রস্তুতি উপস্থাপন করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর তাদেরকে কিছু বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে করদাতা কিংবা ভোক্তার ওপর বাড়তি করের চাপ দেওয়া ঠিক হবে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হবে। সেটি করতে গেলে, আগামী অর্থবছরের জন্য বাড়ো রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যামাত্রা নেওয়া ঠিক হবে না।