শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জরুরিভাবে ৬২২২ কোটি টাকা বিনা সুদে ঋণ দিচ্ছে আইএমএফ

আপডেট : ৩০ মে ২০২০, ১৯:০৪

করোনা পরিস্থিতি  মোকাবেলায় জরুরিভাবে বাংলাদেশের জন্য ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ৬২২২ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে দ্রুত এই অর্থ ছাড় করা হবে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

এক বিবৃতিতে শনিবার আইএমএফ এর পক্ষ হতে উল্লেখ করা হয়েছে, কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ব্যাপক হারে কমে গেছে। সেইসাথে বিরূপ প্রভাব পড়েছে রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বা ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ঠিক রাখা এবং বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে জরুরিভাবে এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। 

আইএমএফ উল্লেখ করেছে এই ঋণ বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ সামাজিক নিরাপত্তা আরও জোরদার এবং অর্থনীতিকে সঠিক পথে রাখতে যে প্রণোদনা কর্মসূচি নিয়েছে তা বাস্তবায়নের পথ সহজ হবে।

উল্লেখ্য, করোনা প্রভাব শুরু হওয়ার পর সদস্য দেশগুলোকে সহায়তার জন্য র্যাপিড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (আরসিএফ) তহবিল গঠন করে আইএমএফ। এই তহবিল হতে বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ঋণের দুই কিস্তি এক বছরের মধ্যেই ছাড় করা হবে এবং তিন বছরের মধ্যে বাকি অর্থ ছাড় হবে। আরসিএফ তহবিলের ঋণ সাড়ে ৫ বছরের রেয়াতকালসহ ১০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেলে বা বাণিজ্য ঘাটতির দায় বেড়ে গেলে আইএমএফ এর ঋণ গ্রহণ করা হয়। 

আইএমএফ প্রায় বিনা সুদে ঋণ দিলেও বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়। এর আগে বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার সময় বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম সমন্বয়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি কমানো, বাজেটে ভর্তুকি কমানো, সঞ্চয়পত্রে সুদ কমানো, সরকারি ব্যাংকগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ নানা শর্ত পালন করতে হয়। শর্তের সাথে অর্থছাড়ের বিষয়টি জুড়ে দেওয়া হতো। অর্থাৎ যতটুকু শর্ত পালন করা হতো ততটুকু অর্থ ছাড় করা হতো। এবার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেরকম কোনও শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়নি। তবে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চত করতে বলা হয়েছে। 

আইএমএফ বিবৃতিতে বলেছে, কভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রাজস্ব আদায় বাড়ানো, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সংস্কার আনার চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, যা বিনিয়োগ বাড়ানোর পূর্বশর্ত। আইএমএফ বলেছে, এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং সরকার বাস্তবায়নে কী করছে, তা ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখবে আইএমএফ। 

আইএমফ এর ডেপুটি ম্যনেজিং ডিরেক্টর এন্থনি সাইয়ে উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুই খাত তৈরি পোশাক শিল্প এবং রেমিট্যান্স এই করোনা প্রভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইএমএফ এর সহায়তা বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট রক্ষা করতে সহায়তা করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে। যদি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও অবনতি হয় এবং মুল্যস্ফীতি ধরে রাখা যায় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে এই উদ্যোগ আরও বাড়াতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখতে মুদ্রামানে নমনীয় হতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমান সংকট কেটে যাওয়ার পর আবারও ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো সমাধানে মনোযোগ দেওয়া হবে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ কমানো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা কাটাতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেইসাথে রাজস্ব প্রশাসন শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করা হবে।


ইত্তেফাক/ইউবি