চামড়া শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় চামড়া ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের লাভের কথা বিবেচনা করে কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এতে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণ করার সক্ষমতা অর্জন করবেন।
সোমবার চামড়া শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রী একথা বলেন। ভার্চুয়ালি সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান,পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব কে এম আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, বিসিক চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ, বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় জানানো হয়, আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মসজিদের ইমাম, মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী,চামড়া ছড়ানোর সাথে জড়িতদের চামড়া ছড়ানো ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
সভায়, তথ্য মন্ত্রণালয় ও লেদার বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের মাধ্যমে ঈদ-উল-আযহার কয়েকদিন পূর্ব হতে টেলিভিশনে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারনা কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান ট্যানারি শিল্পের জন্য বাজেট সহায়তা নিশ্চিত করতে অর্থ বিভাগের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন,হাজারিবাগে ট্যানারি মালিকদের জমি হতে রাজউকের ‘রেড জোন’ প্রত্যাহার করা হলে মালিকদের ঋণ পেতে সুবিধা হবে। ট্যানারি মালিকদের জন্য ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় চামড়ার পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে তিনি আশংকা করেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন দেশে পরিবেশসম্মত চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় চামড়া সংরক্ষণে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন,কওমি মাদ্রাসাগুলো বহুদিন ধরে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে জড়িত এবং এ থেকে অর্জিত আয় দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। কোরবানি উপলক্ষে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা দিলে তারা আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্র্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার সঠিক মূল্য নির্ধারণ এবং ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শিল্প সচিব কে এম আলী আজম বলেন,আসন্ন ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে চামড়া ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, উপজেলা নির্বাহি অফিসার, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হবে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর ট্যানারিসমূহে বর্তমানে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার চামড়া জমা আছে। ট্যানারি মালিকদের জন্য আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ঋণ সহায়তার নিশ্চিত করা ছাড়া অধিকাংশ ট্যানারি মালিকদের পক্ষে চামড়া ক্রয় সম্ভব হবেনা। তিনি এ বিষয়টি সুরাহার জন্য টাস্কফোর্স সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সমাপনী বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে চামড়া শিল্প যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে লক্ষ্যে ট্যানারি মালিক, আড়তদার, চামড়াখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরণের কৃটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পের শ্রমিকদের সহযোগিতা প্রদান এবং বিগত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আসন্ন ঈদ-উল-আযহার সময় চামড়ার সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। এ লক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে খোলা মন নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। বাসস
ইত্তেফাক/কেকে