বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনার মধ্যেও প্রবাসী আয়ে রেকর্ড

আপডেট : ২৬ জুন ২০২০, ০৯:০৬

করোনা ভাইরাসের প্রভাব বিশ্বের সব জায়গায় পড়েছে। ফলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম এ খাতও হুমকিতে পড়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের উপার্জন নেই। অনেকে দেশে ফিরেছেন। আর যারা ফিরতে পারেননি তারাও ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স কমে গিয়েছিল। তবে মে ও জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর চলতি অর্থবছরে কয়েকদিন বাকি থাকতেই আগের অর্থবছরের চেয়ে ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের প্রথম ২৩ দিনে প্রবাসীরা ১৪১ কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত বছরের পুরো জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে।

করোনা মহামারির মধ্যেও প্রবাসী আয়ে রেকর্ড হয়েছে। গত অর্থবছর প্রবাসীরা ১৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। এই অর্থবছরের সাত দিন বাকি থাকতেই তারা ১৭ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের সাত দিন বাকি থাকতেই (গত অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে এই বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত) অর্থাত্ বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের ২৩ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার (১৭ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ের (জুলাই-জুন) চেয়েও ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার (১৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন)। আর এই রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে। বুধবার দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের ইতিহাসে এত বেশি রিজার্ভ আর কখনো ছিল না।

এখন দেশের মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই পরিবারের বিদেশে থাকা সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। আবার করোনা পরবর্তীতে পরিস্থিতি কী হয় সে বিষয়ে বিপদ ও শঙ্কাও কাজ করছে প্রবাসীদের মধ্যে। এসব কারণে প্রবাসীরা বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। অন্যদিকে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার পর রেমিট্যান্স বেড়েছে বলেও দেখা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই করোনার সময়ে প্রবাসীরা অনেক বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ (১ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার। তাতে ১১ মাসেই রেমিট্যান্সের পরিমাণ গত পুরো অর্থবছরের প্রায় সমান হয়ে গিয়েছিল। এখন তা গত অর্থবছরকে ছাড়িয়ে গেল। অবশ্য গত মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। পরের মাস এপ্রিলে রেমিট্যান্স আরো কমে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম।

কিন্তু মে মাসে চিত্র পালটাতে থাকে। মে মাসের প্রথম ১১ দিনে ৫১ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে, ৩১ মে মাস শেষে সেই রেমিট্যান্স গিয়ে দাঁড়ায় ১৫০ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। আর জুনের প্রথম ১৮ দিনেই ১২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। বুধবার (২৪ জুন) দিন শেষে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

প্রসঙ্গত, গত ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের যে নতুন বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতেও প্রবাসীদের জন্য ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।