বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নতুন অর্থবছরে ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ বাড়বে

আপডেট : ০১ জুলাই ২০২০, ০৪:০৩

আজ থেকে শুরু হচ্ছে নতুন অর্থবছর। বাজেটে আয়কর ও মূল্য সংযোজন করে (ভ্যাট) যে ধরনের পরিবর্তন চেয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা, তা হয়নি। আয়করে কিছু ছাড় দেওয়া হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কর্তন করা হয়েছে বেশ কিছু সুযোগ। অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে কর প্রদানের বাধ্যবাধকতাও তৈরি হয়েছে। ভ্যাটের ক্ষেত্রে ঐ একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানেও ব্যবসায়ীদের কিছু শর্ত ও বাধ্যবাধকতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। গত সোমবার অর্থবিল পাশের সময় কিছু সংশোধন এলেও সার্বিক অবস্থা ব্যবসায়ের জন্য ইতিবাচক নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ভ্যাট-ট্যাক্স ইস্যুতে সামনে কঠিন সময় আসছে ব্যবসায়ীদের জন্য। বিদ্যমান করোনার সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বরং ছাড় দেওয়ার দরকার ছিল। দুই-একটি ক্ষেত্রে তা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা নানা শর্ত, জবাবদিহির মধ্যে পড়বেন। এর ফলে জটিলতা ও হয়রানিও বাড়তে পারে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্তের জন্য সময়টি সঠিক হয়নি বলেও মনে করছেন তারা।

বাজেটে আয়করে ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া কেবল শেয়ারবাজারে অনিবন্ধিত কোম্পানির আয়করে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে কোম্পানির প্রমোশনাল ব্যয় ও ভ্রমণে বিদ্যমান অনুমোদিত ব্যয়ের সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কোম্পানির কর বেড়ে যাবে। বছরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বিক্রয়ের ওপর ন্যূনতম কর আরোপ করা হয়েছে। ফলে অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ওপর বিপুল পরিমাণ করের বোঝা চাপবে। তারা নিজের ঘাড়ে না নিয়ে এটি চাপিয়ে দিতে চাইবে ভোক্তার ওপর। এতে বেড়ে যেতে পারে পণ্যমূল্য। রপ্তানির আয়কর গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ভ্যাটের নিচের সারির কর্মকর্তারা অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যে কোনো সময় অভিযান চালাতে পারবেন। এর ফলে বেড়ে যেতে পারে ব্যবসায়ীদের হয়রানি। ভ্যাট রেয়াত নেওয়ার সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে কিছু পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে। বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ আসার পাঁচ দিনের মধ্যে বাধ্যতামূলক বিল অব এন্ট্রি দাখিল করতে হবে। আমদানি পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে আগে নিজ নিজ ব্যবসায়ী সমিতির প্রত্যয়নপত্র জমা দিলেই হতো। এখন স্থানীয় ভ্যাট অফিস থেকে অনুমোদন নিতে হবে। একইভাবে আরো কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: মাতাল পুলিশ সুপারের কাণ্ড!

অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ইত্তেফাককে বলেন, গত দুই বছরে ভ্যাট ব্যবস্থায় যেসব পরিবর্তন এসেছে, তার প্রায় সবই আধুনিক ভ্যাট আইনের পরিপন্থি। পৃথিবীর কোনো দেশে অগ্রিম কর বা অগ্রিম ভ্যাট (এটি) নামে কিছু নেই। এখানে জোর করে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, এনবিআরের সংস্কার দরকার ছিল। তা না করে নিচের সারির কর্মকর্তাদের হাতে অবাধ ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হলো। এতে ভয়ানক হয়রানি হবে।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারের (এফআইসিসিআই) প্রেসিডেন্ট রূপালী চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আনতে চাই, কিন্তু এ ধরনের করকাঠামো হলে বিদেশি বিনিয়োগ কীভাবে আসবে? আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর করকাঠামো বিবেচনায় নিতে হবে। নতুন করে করের চাপ অনভিপ্রেত। ব্যবসায়ের সুযোগ না পেলে সরকার কর পাবে কোথা থেকে?’

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সাবেক সিনিয়র ইকোনমিস্ট ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ ইত্তেফাককে বলেন, নতুন এসব পরিবর্তনে ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বেন। বর্তমানে করোনার সংকট মোকাবিলা করা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য যে ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্সের ব্যবস্থা হওয়া দরকার ছিল তা হয়নি। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য যে ধরনের সুবিধা দেওয়ার দরকার ছিল তা এবার হয়নি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ ইত্তেফাককে বলেন, বাজেটে কিছু ইতিবাচক বিষয় থাকলেও সার্বিকভাবে তা বিনিয়োগ তথা বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সহায়ক হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান চান। কিন্তু ভ্যাট-ট্যাক্সের এবারের পরিবর্তন প্রধানমন্ত্রীর স্পিরিটের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। আশা করছি সামনের দিকে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

ইত্তেফাক/এসি