শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সীমান্তে পশু-পাখির স্বাস্থ্য পরীক্ষা : নবনির্মিত ২৪ কোয়ারেন্টাইন স্টেশনের ২২টিই অচল

আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২০, ০০:৫৭

দেশে আগত পশুপাখির মাধ্যমে রোগবালাই প্রতিরোধে বন্দর ও সীমান্ত এলাকায় ২৪টি কোয়ারেন্টাইন স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়েছে ২০১৭ সালে। কিন্তু এর মধ্যে ২২টি কেন্দ্র এখনো সচল হয়নি। শুধু হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে স্থাপিত দুটি কেন্দ্র সীমিত আকারে চালু হলেও সেখানে নেই কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা। জানা গেছে, ঐ ২২টি কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র নির্মাণের পর ব্যবহারই করা হয়নি। এসব স্টেশনের জন্য কেনা অনেক যন্ত্রপাতি বাক্সবন্দি হয়ে অচল হয়ে গেছে। ‘প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর এর প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব চিত্র উঠে এসেছে।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বিমানবন্দর স্টেশন দিয়ে আগত এক দিনের মুরগির বাচ্চা পরীক্ষার জন্য রাজধানীর কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে পাঠানো হয়। আর চট্টগ্রামের স্টেশন দিয়ে শুধু প্রাণিখাদ্য পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সমুদ্রবন্দর দিয়ে কোনো জীবিত প্রাণি আমদানি-রপ্তানি করা হয় না। এছাড়া কক্সবাজার জেলার টেকনাফে স্থলবন্দর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে কোয়ারেন্টাইন স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার বিটুলি স্থলবন্দর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে কোয়ারেন্টাইন স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। দেখা গেছে, অধিকাংশ কোয়ারেন্টাইন স্টেশন স্থলবন্দর থেকে অনেক দূরে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে আমদানিকারকেরা বর্ডার পার হয়ে স্টেশন এড়িয়ে অন্য পথে প্রাণী প্রবেশ করাচ্ছেন। কিছু অস্থায়ী জনবলের মাধ্যমে কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রগুলো চলছে, অথচ প্রকল্পের আওতায় ২০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিদেশে স্টাডি ট্যুর করেছেন।

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ‘প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ’ (দ্বিতীয় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পটি ৭৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করে। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের মূল্যায়ন করে। সে সময় প্রল্পটির পরিচালক ছিলেন ডা. মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি অবসরে চলে গেছেন।

 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার ইত্তেফাককে বলেন, জনবলের সংকটের কারণে কোয়ারেন্টাইন স্টেশনগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগযোগ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে সারা দেশে মোট আটটি আঞ্চলিক প্রাণিরোগ গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো অনেক পুরোনো। প্রাণিরোগ নিয়ে গবেষণার জন্য সাভারে একটি পূর্ণাঙ্গ আধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপনের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রাণিরোগ নিয়ে গবেষণা এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে আলোচ্য প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধন করে কোয়ারেন্টাইন স্টেশনগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 

উল্লেখ্য, গবাদি ও পোষা প্রাণি, প্রাণিখাদ্য, টিকা, সিমেন্ট ও সিমেন্ট তৈরির উপকরণসমূহ পরীক্ষা করে রোগমুক্তভাবে প্রবেশের নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের ১৭ জেলার ২৪টি প্রবেশপথে ২৪টি কোয়ারেন্টাইন স্টেশন স্থাপনের জন্য সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। সেই সঙ্গে এসংক্রান্ত ডাটাবেজ তৈরিরও লক্ষ্য ছিল, কিন্তু সেটাও করা হয়নি।

 

ইত্তেফাক/এএম