করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকলে বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাকের চাহিদা কমতে পারে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন কমার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে ২০০৮-০৯ সালের বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির চেয়েও বাজে অবস্থা দেখতে হতে পারে। এই কারণে ২০২১ কিংবা ২০২২ সালের আগে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দৃশ্যমান নাও হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১০টি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে পরিচালিত সংস্থাটির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার বিশ্বব্যাপী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করছে আইএলও।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা অতিমারির কারণে ভবিষ্যতে পোশাকশিল্প খাতকে কাঠামোগত পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে হবে। পোশাকের টেকসই সরবরাহ চেইন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মতো বিষয়গুলো ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বহুপাক্ষিক উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছে আইএলও। বিশেষত শ্রমিকের উপার্জন, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান রক্ষা করে করোনায় টিকে থাকার উপায় বের করতে একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে সংস্থাটি।
চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সরবরাহ চেইনে তা বড় রকমের আঘাত হানে। বিশেষত ইউরোপ, আমেরিকাসহ বড় অর্থনীতির দেশগুলো লকডাউনে (প্রায় বন্ধ) চলে যাওয়ায় চাহিদা কমে যায়। ফলে এশিয়ার তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যায়।
করোনার প্রভাবে গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এশিয়ার ১০টি প্রধান তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশে কী প্রভাব পড়েছে—প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও রপ্তানিকারক এসব দেশের তালিকায় রয়েছে চীন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া। প্রতিবেদনে এসব দেশের মূল ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপী ইউনিয়ন ও জাপানে পোশাক পণ্য আমদানি কমার বিষয়টি উঠে আসে। এতে বলা হয়, করোনা শুরু হওয়ার পর কোনো কোনো দেশ থেকে পোশাক রপ্তানি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। এর প্রভাবে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে হাজার হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে বেশকিছু কারখানা স্থায়ীভাবেই বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারণে ঐ সময়ে শ্রমিকের আয় কমে গেছে, অনেক শ্রমিক লে অফের (সাময়িক কারখানা বন্ধ হওয়ায় কর্মহীন) শিকার হয়েছে। এই সময়ে ট্রেড ইউনিয়নের সীমাবদ্ধতায় মালিকপক্ষের সঙ্গে তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার সুযোগও কম ছিল। অবশ্য ঐ সময়ে এসব দেশের বেশির ভাগ সরকারই অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিল। আইএলওর প্রতিবেদনে ঐ বিষয়টিও বিশেষভাবে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে কেবল মিয়ানমার বাদে অন্যান্য দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি সবচেয়ে বেশি হারে কমেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে। ইইউ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। আলোচ্য সময়ে সেখানে পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে ২৮ শতাংশ আর জাপানে কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ।
ইত্তেফাক/ইউবি