শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নভেম্বরেও রেমিট্যান্সের জোয়ার, ৪১ শতাংশ বেড়েছে

আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:৫০

করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন। সদ্যসমাপ্ত নভেম্বরে তারা ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। আর চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৯০ কোটি ৪৪ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা)। রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা) ছাড়িয়েছে। প্রতি ডলার ৮৪ দশমিক ৮২ টাকা ধরে এই হিসাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫২ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বা ৩৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। গত বছরের নভেম্বরে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৭৭১ কোটি ৬২ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা)। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। বৈধ উপায়ে প্রবাসী আয় বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে অনুযায়ী, গত বছরের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পেয়ে আসছেন। এর ফলে করোনার মধ্যেও রেকর্ড গড়ছে রেমিট্যান্স। একই সঙ্গে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে মন্দা কাটাতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৫ লাখ টাকা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার, যা আগে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ এক লাখ ৫৪ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত অর্থ দেশে আসেনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ঐ সময়ে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকা।

আরো পড়ুন : স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি ১১৬৬ টাকা কমল

রেমিট্যান্স বাড়ার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়াকে নির্দেশ করে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মজুত থাকলে তাকে ঝুঁকিমুক্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়। বাংলাদেশের কাছে এখন যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত আছে, তা দিয়ে আট মাসের বেশি আমাদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অক্টোবর শেষে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত বছরের নভেম্বর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছিল ৩১ দশমিক ৭২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গত পাঁচ মাসে যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার এক-তৃতীয়াংশই এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। রেমিট্যান্স বাড়ার বিষয়ে এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে হুন্ডি একেবারেই কমে গেছে। ফলে বৈধ চ্যানেলে টাকা এসেছে। রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনাও অন্যতম একটি কারণ বলে জানান তিনি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার কারণে আমদানি-রপ্তানির মতো রেমিট্যান্সেরও পতন হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। তবে সেটা ঘটেনি, যা অর্থনীতির জন্য ভালো ফল বয়ে এনেছে।

 

ইত্তেফাক/ইউবি