শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাজেট ঘোষণায় মহামারি পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে নিরূপণ করা হয়নি

আপডেট : ০৬ জুন ২০২১, ০২:৩৪

বাজেটের অনেক জায়গায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কথা বলা হলেও সামাজিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে প্রতিফলিত হয়নি। করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, দারিদ্র্য, বৈষম্য ইত্যাদি সামাজিক বিষয় পুনরুদ্ধারের কথা বাজেটে আরো সুস্পষ্ট ও গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল। প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এক বিশ্লেষণে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এ মন্তব্য করেছে।

শনিবার (৬ জুন) ভার্চুয়াল পদ্ধতীতে বাজেট-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সানেম। এতে বক্তব্য দেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান ও গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা।

ড. সেলিম রায়হান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বাজেট ঘোষণায় মহামারি পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে নিরূপণ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে বিপদ হচ্ছে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে একধরনের শৈথিল্য কাজ করে। নীতিনির্ধারকেরা যদি এরকম একটি সংকটের সময়ে মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিরূপণ না করেন, তাহলে যথার্থ নীতি প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। মহামারির কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলোকে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে ‘এডহক’ভাবে, সামগ্রিক কোনো পরিকল্পনার অধীনে নয়। বাজেট ঘোষণায় অগ্রাধিকার খাত সঠিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে, এজন্য সানেমের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই অগ্রাধিকারের খাতগুলোতে কীভাবে বাজেট বাস্তবায়িত হবে, সেই রোডম্যাপ বাজেট ঘোষণায় অনুপস্থিত।

শিক্ষা খাত করোনা মহামারির কারণে যে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার উল্লেখ বাজেটে সঠিকভাবে করা হয়নি। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, বাল্যবিবাহের হার বাড়ছে ইত্যাদি বিষয় মোকাবিলায় শিক্ষা খাতে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা বাজেট ঘোষণায় নেই।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরোনো গরিবদের যে তালিকা, সেটি ত্রুটিপূর্ণ, অনেক গরিব মানুষ সেই তালিকায় নেই, আবার অনেক সচ্ছল মানুষ সেখানে সামাজিক ভাতা পান। আর মহামারির কারণে নতুন করে যারা গরিব হয়েছেন, তাদের কোনো তালিকাই সরকারের কাছে নেই। মহামারির সময়ে সরকারের যে প্রতিষ্ঠানগুলোর এই তালিকা প্রস্তুত করার কথা ছিল, তারা সে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই গরিব জনগোষ্ঠী এই সংকটকালীন সময়ে কীভাবে সহায়তা পাবেন, সে বিষয়ে বাজেটে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল।

এই বাজেটে বিভিন্ন খাতে আমদানি প্রতিস্থাপক শুল্কের কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের শুল্ক কিছু ক্ষেত্রে সহায়তা করলেও, মোটাদাগে বলা যায় এ ধরনের পদক্ষেপ দেশীয় শিল্পকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে না। অধিকন্তু বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতিতেও এই পদক্ষেপ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

ড. সায়মা হক বিদিশা তার আলোচনায় বলেন, বাজেটে মোটামুটিভাবে গত বছরগুলোর একটা ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে এবং আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ফারাক রয়ে গেছে। এই বাজেট ব্যবসাবান্ধব। ব্যবসাবান্ধব বাজেটের ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে অবশ্যই তার একটা ইতিবাচক দিক রয়েছে। একটা অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের সার্বিকভাবে প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পাই। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, যে ব্যবসাকে চাঙ্গা করতে প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে, সেটার সুবিধা সাধারণ জনগণ, নিম্ন আয়ের মানুষ, মধ্যবিত্তরা কতটা পাবে তা সুস্পষ্ট নয়। যে ছাড়গুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মধ্যম আকারের প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা সুবিধা পাবে তা সুস্পষ্ট নয়।

তিনি বলেন, বাজেটে সামগ্রিক পরিকল্পনার ঘাটতি আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কিছু ছাড়, প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ই-লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে, ১০ লাখ মানুষকে আইটি খাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কিন্তু এ বিষয়গুলো বাংলাদেশের শ্রমবাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খুবই ছোট ছোট উদ্যোগ। তিনি বলেন, কর অব্যাহতি দেওয়া নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে। কর ও ব্যাংকিং খাতে যে সংস্কার দরকার রয়েছে, সেগুলোকে কেন্দ্র করে একটা কর্মপরিকল্পনা দরকার ছিল।

ইত্তেফাক/এমএএম