বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনায় বিপর্যস্ত রেস্তোরাঁ খাত

আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২১, ০৮:০১

করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় চলমান লকডাউনে হোটেল-রেস্তোরাঁ কার্যত বন্ধ। অনলাইনে বিক্রি চালু থাকলেও তাতে চাহিদা খুব কম। আর জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত মানুষ বাদে ঘরের বাইরে কেউ নেই।

এতে রেস্তোরাঁগুলোতে বেচা-বিক্রি নেই বললেই চলে। গত বছর মার্চ থেকে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর এমনিতেই বিক্রি কমে গিয়েছিল। আর এখন কঠোর লকডাউনে রেস্তোরাঁ মালিকদের অবস্থা এতটাই খারাপ যে ব্যবসা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তথ্যমতে, রাজধানীসহ সারা দেশে ৭০ থেকে ৮০ হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে আছে প্রায় ৮ হাজার রেস্তোরাঁ। ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আছে সাড়ে ৪ হাজার। আর উত্তর সিটিতে আছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রেস্তোরাঁ।

ছবি: সংগৃহীত

সারা দেশের হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে বলে জানা গেছে। সমিতির তথ্যমতে, করোনা শুরু হওয়ার পরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এ খাতের অবস্থা আরো ভয়াবহ।

সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, গত বছর থেকে করোনা ভাইরাসজনিত কারণে বড় একটা সময় রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। এর বাইরে কখনো ৫০ ভাগ আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ সীমিত আকারে খোলা ছিল। আবার কখনো অনলাইন বা টেকওয়ের মাধ্যমে ব্যবসা চলেছে। কিন্তু এভাবে অনলাইন ডেলিভারি বা টেকওয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা বন্ধ হওয়ার জোগাড়। অনেকে এরই মধ্যে ব্যবসা বন্ধও করে দিয়েছে। সার্বিকভাবে এ খাতের ব্যবসায়ীরা আজ দিশাহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

এত বড় একটি খাত হওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত সরকার থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে জানান সমিতির মহাসচিব।

তিনি বলেন, অন্যান্য সহযোগিতা তো দূরে থাক এ খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণও পান না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পচনশীল (পেরিশেবল) পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে লোন প্রদান করা যাবে না বলে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনার কারণে আমরা ঋণ পাচ্ছি না। অথচ এ খাতের ব্যবসায়ীরা যদি ঋণ পেতেন তাহলে করোনার মধ্যেও ব্যবসার ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারতেন।

করোনার এই কঠোর সময় পাড়ি দিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

ছবি: সংগৃহীত

একই সঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে ঋণ অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা/নীতিমালা সংশোধন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। তবে রেস্তোরাঁ খাতের জন্য এখন পর্যন্ত এক পয়সাও দেওয়া হয়নি। এ খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্যও প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তবে এ খাতের জন্য কোনো ঘোষণা আসেনি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১ হাজার কোটি টাকার তহবিল দেওয়া হলেও সেখানে হোটেল, মোটেলের বিষয় ছিল। রেস্তোরাঁ খাতের নাম উল্লেখ করা হয়নি। রেস্তোরাঁ মালিকরা বলছেন, গত বছরের জুলাই থেকে রেস্তোরাঁগুলো আবার চালু করার পর থেকে তারা প্রায় ৬০ শতাংশ লোকসান পুষিয়ে নেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক করোনার প্রকোপ ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের ব্যবসায় পুরোপুরি ধসে পড়েছে। রেস্তোরাঁ মালিকরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আওতায় স্বল্প সুদে ঋণের আবেদন করেছেন।

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি মনে করে, করোনার প্রথম ঢেউয়ে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে ৩০ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা না হলেও প্রায় ৯৯ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত। সব মিলিয়ে সারা দেশে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে এ খাত।

পর্যটন খাতের হোটেল-মোটেল-থিম পার্কের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য মূলধন সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৫ জুলাই ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৪ শতাংশ সুদে ১ বছর মেয়াদে এই ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা। সুদের হার ৮ শতাংশ হলেও সরকার ৪ শতাংশ ভর্তুকি দেবে।

ইত্তেফাক/এএএম