মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হঠাৎ কমে গেলো রেমিট্যান্স

আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২১, ০৯:২২

গত দেড় বছর ধরেই করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। এরপরও রেমিট্যান্স আয় ভালো হয়েছে। গত অর্থবছরের পুরোটা সময় জুড়েই আগের বছরের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে হঠাৎ করে রেমিট্যান্স কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে তেমনটাই দেখা গেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন: ঋণ পরিশোধের সীমা আরও দুই মাস বাড়লো

তথ্য মতে, চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার (১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা টাকার হিসাবে মুদ্রায় ১৫ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। যা তার আগের মাস জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম এবং আগের বছরের (২০২০ সালের জুলাই) একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। গত বছর জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। এদিকে হঠাত্ প্রবাসী আয় কমে যাওয়াকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে অনেক দেশে লকডাউন চলছে। এর ফলে প্রবাসীদের আয়ও কমেছে। এসব কারণে রেমিট্যান্স পাঠানো কিছুটা কমেছে।

রেমিট্যান্সে সুখবর দিল বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, সদ্যসমাপ্ত জুলাই মাসে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। জুলাইয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ৪৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার এবং বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ২২ লাখ ডলার। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৪০ কোটি ১২ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।

সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৫ কোটি মার্কিন ডলার। এরপরে রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংক। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২২ কোটি ৯১ লাখ ডলার। এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার এবং জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫ কোটি ৯২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।

১০ মাসেই সাড়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড রেমিট্যান্স

সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে। যা আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। অর্থবছরের হিসাবে এ যাবত্কালে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ২০২০-২১ অর্থবছরে। জুলাইয়ে হঠাত্ প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে বহির্বিশ্বের অনেক দেশে লকডাউন চলছে। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে প্রবাসীদের আয় কমেছে। প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। বৈধ উপায়ে প্রবাসী আয় বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে অনুযায়ী, ঐ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পেয়ে আসছেন। এর ফলে করোনার মধ্যেও রেকর্ড গড়ছে রেমিট্যান্স। 

চলতি বছরে রেমিটেন্স প্রবাহ ৫৭৩ ডলারে নেমে আসতে পারে

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা করেন যে, প্রবাসীদের পাঠানোর রেমিট্যান্সের উপর এখন যে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে তা অব্যাহত এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক রাখতে ২ শতাংশের সঙ্গে আরো এক শতাংশ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ইত্তেফাক/কেকে