করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্য হুহু করে বাড়ছে। তেল, গ্যাসসহ জ্বালানির মূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবহন খরচ। এর প্রভাবে নিত্য পণ্যের দামও বেড়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্য ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেপ্টেম্বরে খাদ্যের মূল্য ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লক্ষ্য করা গেছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি পণ্যমূল্য বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে এমনটাও আশা করছেন না বিশ্লেষকরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, মহামারি শুরুর পর সারা বিশ্বে খাদ্যমূল্য গড়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। করোনা অতিমারির মধ্যে বিভিন্ন দেশের উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। অনেক দেশেই কাঁচামালের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। শস্য থেকে শুরু করে ভোজ্য তেল সবকিছুর উত্পাদন ব্যাহত হয়েছে। সম্প্রতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বলেছিলেন, বর্তমান যে মূল্যস্ফীতি সেটি মূলত সরবরাহজনিত, চাহিদাজনিত নয়। সরবরাহ সংকট তৈরি হওয়ার জন্য এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকলে পুঁজি চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া মুদ্রার বিনিময় হারও কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া শ্রম আয়ের ওপর নির্ভরশীল নিম্ন আয়ের মানুষও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ মানুষের ব্যয়ের বড় একটি অংশ চলে যায় খাদ্যের পেছনে।
বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের বাজারেও বাড়ছে নিত্য পণ্যের দাম। ফলে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির হার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী আগস্ট, সেপ্টেম্বর টানা বেড়েছে নিত্য পণ্যের দাম। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশে। আগস্টে ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জুলাইয়ে ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। শিল্প খাতের কাঁচামাল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের প্রায় প্রতিটিরই আন্তর্জাতিক বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সার্বিকভাবে দেশের আমদানি খরচ বাড়ছে। সেসঙ্গে ডলারের দরও হটাত্ বেড়েছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এখন টান পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও।
শুধু দেশের বাজারেই নয়, উন্নত অনেক দেশেই এখন রেকর্ড মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য করা গেছে। ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে কানাডায়। সেপ্টেম্বরে দেশটির ভোক্তা মূল্যসূচক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৩ সালের পর এই প্রথম এতটা মূল্যস্ফীতি বাড়ে কানাডায়। এদিকে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য করা গেছে যুক্তরাজ্যে। আগস্টে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশে উঠে যায়। ১৯৯৭ সালের পর থেকে দেশটিতে এতটা বাড়ল মূল্যস্ফীতি। অন্যদিকে মার্কিন শ্রমবিভাগের তথ্যানুযায়ী সেপ্টেম্বরে দেশটিতে ভোক্তা মূল্যসূচক গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে। দেশটির মূল্যস্ফীতি এখন ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে উন্নত বিশ্বে মূল্যস্ফীতির পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৮০ ডলার পার করেছে। তরল গ্যাসের দরও রেকর্ড পার করছে। বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, কয়েক মাসের মধ্যেই জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ইত্তেফাক/জেডএইচডি