শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করাতে চাই দ্রুত ও মানসম্পন্ন বাস্তবায়ন: ড. আতিউর

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:০০

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এই মূহুর্তে বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও নিয়ম-কানুনের কমতি নেই। এখন দরকার সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মানসম্পন্নভাবে পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন।’ 

শনিবার ব্র্যাক ইনে ৪র্থ সানেম কনফারেন্সে ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান এই কনফারেন্স উদ্বোধন করেন। অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, এম. কে. মুজেরিসহ দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে বিদেশি প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তরুণ গবেষকরা কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। 

সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ক অধিবেশনের সমাপনি বক্তব্যে ড. আতিউর বলেন যে, ‘গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় মাত্রায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে গেছে। ধারাবাহিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি, নিয়ন্ত্রিত মূদ্রাস্ফীতি এবং টাকার বিনিময় হার ইত্যাদি এ কথা প্রমাণ করে। বিদেশি মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পরও অতি সম্প্রতি টাকার বিনিময় হারে কিছুটা অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে রিজার্ভ বৃদ্ধির গতি কমেছে, এমন কি হয়তো রিজার্ভ কিছুটা ক্ষয়ও হয়েছে। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহে যে গতি হালে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রপ্তানির পরিমাণ যেভাবে বেড়েছে তাতে অচিরেই হয়তো রিজার্ভের ওপর এগুলোর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধরে নেওয়া যায়।’

ড. আতিউর আরও বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে হার বাংলাদেশ ধরে রেখেছে তা অব্যাহত রাখা গেলে প্রতি দশ বছরে দেশের অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য, জেন্ডার ভারসাম্য, অন্তর্ভুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকেও বাংলাদেশ সমতুল্য দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে। আর ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধিতে তো বাংলাদেশের অর্জন এক কথায় অতুলনীয়। দেশের আট কোটি মানুষের বয়স ৩০ বছরের নিচে থাকা এবং জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্বও বাংলাদেশের জন্য বিশেষ উপকারী হবে।’ এছাড়া ভৌগলিকভাবে ভারত, চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর ঠিক মাঝখানে অবস্থিত হওয়ার কারণেও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিচারে বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

আগামীতে বাংলাদেশ কোন পথে এগুবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে এবং আগামী বছরগুলোতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হবে তাও ইতোমধ্যে তুলে ধরা হয়েছে।তবে এই পরিকল্পনা কখন এবং কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সেটাই মূল চ্যালেঞ্জ। যে নীতি-কৌশলগুলো উপস্থাপিত হয়েছে সেগুলোর মানসম্পন্ন বাস্তবায়নই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন ড. আতিউর।

এ জন্য মোটা দাগের নির্দেশনা ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে।দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে মূল সুর ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এখন এই বড় স্বপ্নগুলো ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিয়ে সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাটাই হবে প্রধান কাজ। এ জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার লক্ষ্যে দুই তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে সেগুলো নিখুঁতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেন ঠিক সময়ে সঠিক সেবা পান সেটা নিশ্চিত করার জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের নীতি নির্ধারকদের ডিএইচএল ট্র্যাকারের মতো কৌশলগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে গৃহীত নীতিগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন তদারকি করতে হবে।

আরও পড়ুন: সানাই মাহবুবকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ

ড. আতিউর বলেন, ‘বিনিয়োগ অনেকটুকু নির্ভর করে ব্যক্তির ক্যারিশমার ওপর, এটা অনেকটা ‘প্রথম দেখায় প্রেমের’ মতো। ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে দেশে একবার প্রবেশ করার পর একজন বিনিয়োগকারীর কাছে নতুন করে দেশকে উপস্থাপনের আর সুযোগ নেই।’ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে তাদের কর্মকাণ্ড সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ড. আতিউর। 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গল্পটি আমাদেরকে আরও ইতিবাচকভাবে, আরও পরিপূর্ণভাবে, আরও শক্তি ও সৃজনশীলতার সঙ্গে অনবরত বলে যেতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে হবে যে, আমাদের একটি সুন্দর গল্প রয়েছে এবং এই গল্পের এখনও অনেকটাই উন্মোচিত হয়নি।’

ইত্তেফাক/কেকে