সরকার নতুন করে শিল্পে ব্যবহার হওয়া গ্যাসের যে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে গ্যাসনির্ভর দেশের বস্ত্র ও পোশাক কারখানাগুলো লোকসানের মুখে পড়বে। ফলে একে একে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এসব শিল্প, যা এ খাতের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকোচিত হওয়ার পাশাপাশি ও ব্যাংক খাত ও কর্মসংস্থানে আঘাত আসতে পারে।
ফলে দেশের সার্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। গতকাল বুধবার রাজধানীর কাওরানবাজারে বিজিএমইএ ভবনে বস্ত্র ও পোশাক খাতের তিনটি সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ’র উদ্যোগে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উদ্যোক্তারা এ আশঙ্কার কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। দর বৃদ্ধির আগে এ খাতের উপর কী ধরনের প্রভাব আসতে পারে, তা মূল্যায়নের অনুরোধ জানান তারা।
বিজিএমইএ সভাপতি গ্যাস সংকট ও গুণগত মান সম্পন্ন গ্যাস না পাওয়া সত্ত্বেও দফায় দফায় গ্যাসের দর বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে কোথাও এভাবে জ্বালানির দাম বাড়ানোর নজির নেই
বিটিএমএ’র হিসাবে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) প্রস্তাব অনুযায়ী গ্যাসের দর বাড়লে ক্যাপটিভ খাতে প্রতি ঘনমিটারের দর বিদ্যমান ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৮ টাকার উপরে। আর শিল্পে প্রতি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য বিদ্যমান ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় পৌনে দশ টাকায়। বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, গত ১০ বছরে ছয়বারে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৪শ’ শতাংশেরও বেশি। তিনি বলেন, সরকার নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন গ্যাস সরবরাহে অপারগ হওয়ায় বেসরকারি খাতে ক্যাপটিভে বিদ্যুত্ উত্পাদনকে উত্সাহিত করে। গ্যাসের মাধ্যমে এ বিদ্যুত্ উত্পাদনের মূল্য সহনীয় রাখা এ খাতের বিশাল বিনিয়োগের জন্য ছিল এক ধরনের প্রণোদনা।
দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংযোগ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ীকে ডিমান্ড নোট দেয়া হয়েছে, কিন্তু সংযোগ এখনো পায়নি। ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে ১০ বছরের জ্বালানির দাম বৃদ্ধির রূপরেখা দিতে হবে। সে রূপরেখা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করবে। কিন্তু এক সকালে ঘুম থেকে উঠে ১৩২ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির খবর শুনতে চাই না। তিনি বলেন, প্রাইমারি টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। পোশাক খাতের মোট রফতানির বিপরীতে প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতের অবদান প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলারের মতো।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, তিতাস গ্যাস কোম্পানি ভর্তুকি নিয়ে চলছে, অথচ শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফা দিচ্ছে ৩৫ শতাংশ। আর আমরা দুই শতাংশও ব্যবসা করতে পারি না। দ্রুত জ্বালানি নীতি করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, শিল্পকে ধ্বংস করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। শুধুমাত্র একটি খাতের কথা বিবেচনা না করে দেশের সামগ্রিক উত্পাদনশীল খাতের স্বার্থ বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মুনসুর আহমেদ।
ইত্তেফাক/আরকেজি