শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ০১:০৬

শেয়ারবাজারে টানা দরপতন অব্যাহত। কোনোভাবেই কাটছে না লেনদেন খরা। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজি হারাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক ও আস্থাহীনতা। 

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দফায় দফায় বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেও বাজারের অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ।

আগের ধারাবাহিকতায় বাংলা বছরের শুরুর দুই কার্যদিবসের দুই দিনই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে। এই দরপতনের প্রতিবাদে ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা।

এদিকে, বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। সংগঠনটির সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজারের জন্য এখন বিনিয়োগকারীদের আস্থা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর এ আস্থা ফিরে আসবে একমাত্র খায়রুল হোসেন পদত্যাগ করলে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে একজন নীতিবান বিনিয়োগবান্ধব মানুষ দায়িত্ব না নেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে না। তাদের নীরব কান্নাও শেষ হবে না।

বিক্ষোভকারী বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কারসাজি চক্রের খপ্পরে পড়ে শেয়ারবাজারে এমন টানা দরপতন হচ্ছে। এতে তাদের পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে নীরবে পুঁজি হারাচ্ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। বড়ো বিনিয়োগকারীদেরও অবস্থা খারাপ। বাজারের এমন অবস্থার পরও বিএসইসি কিংবা ডিএসই কেউই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। কারণ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে অর্থাত্ আওয়ামী লীগ নতুন করে সরকার গঠন করায় বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়েছিলেন। তারা মনে করেছিলেন যে, সরকারের ধারাবাহিকতা থাকা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করার পর শেয়ারবাজার চাঙ্গা হবে। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটা ঘটেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, বাজার এখন যে অবস্থায় চলছে তা হতাশাজনক। বিনিয়োগকারীদের পুঁজি আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের বিশ্বাসের জায়গা কমে যাচ্ছে। তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নতুন ও ভালো শেয়ারবাজারে আনার বিকল্প নেই।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল ডিএসইর লেনদেনের পরিমাণ এত কম ছিল যে ৩০০ কোটির ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। এদিন ২০০ কোটি টাকার ঘরেই লেনদেন আটকে ছিল। গতকাল ডিএসই ও সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার তালিকায় নাম তুলতে পারে। বিপরীতে দাম কমার তালিকায় ছিল ২৫৩টি। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির দাম।

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৬০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৪৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ২৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৭৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ ১৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২১২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্য সূচকের এ পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৬৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯৬ কোটি ২ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স ১১৫ পয়েন্ট কমে ৯ হাজার ৭৪৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৯টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির।

আরও পড়ুন: আশুগঞ্জে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ৩০

ইত্তেফাক/নূহু