শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কেলেঙ্কারির হোতারা আরো শক্তিশালী হচ্ছে

আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:০৮

বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন অস্বাভাবিক নয়। সেটিও শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটে। তবে বাংলাদেশের মতো অস্বাভাবিক পতনের ঘটনা খুব কমই ঘটে। এখানে বেশ কয়েকটি শব্দের এতই শক্তি যে, বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব শব্দের প্রভাব বেশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গুজব, ফাঁকি, ম্যানিপুলেশন, ইনসাইডার ট্রেডিং প্রভৃতি শেয়ারবাজারের পরিচিত (নেতিবাচক) শব্দ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ধস আতঙ্ক। বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ বলছেন, শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারির হোতারা শুধু সক্রিয় নয় বরং আরো শক্তিশালী হচ্ছে! তারা বলছেন, বাজারের এখন যে ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে তাতে নতুন কোনো অঘটনের আশঙ্কা অমূলক নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনো কোনো বিনিয়োগকারী বলছেন, বাজার কারো কারো অঙুলি হেলনেই যেন চলে। এখানে প্রতিবাদ করতেও ভয় হয়। কারণ, কেলেঙ্কারির হোতারা এতই ক্ষমতাবান যে তাদের বিরুদ্ধে লড়বে এমন সাধ্য কারো নেই। তারা ২০১০ এর শেয়ার কেলেঙ্কারির পর তদন্ত রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ঐ রিপোর্টেই বলা হয়েছে এরা ক্ষমতাবান। সেই ক্ষমতাবানদের কেউ কেউ নীতিনির্ধারণেও জড়িয়ে গেছেন— এমন মন্তব্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। ফলে তাদের ভয় আরো বেড়েছে।

বাজার গবেষকদের কেউ কেউ বলছেন, বাজারের গভীরতাও বেশি নয়। এখানে ভালো কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা কম। স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দৌরাত্ম্যে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারাতে হচ্ছে। বাজারে ভালো শেয়ার নিয়ে আসার উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের কেলেঙ্কারির কথা এখনো কেউ ভোলেনি। ঐসব কেলেঙ্কারির হোতাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। দেওয়া হয়নি কোনো শাস্তি।

ডিএসইএ’র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন সুশাসনের অভাবকে এর পেছনে বড় কারণ বলে মনে করছেন। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, বেশকিছু বড় কারসাজির অভিযোগে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। আবার কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে কিংবা কিছু শাস্তি হলেও তা অপরাধের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। যে শাস্তি হয়, তাতে উল্টো কারসাজির হোতারা উত্সাহিত হন। সম্প্রতি কিছু কারসাজির তদন্তও আলোর মুখ দেখেনি। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত আস্থা হারাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ, আইসিবি’র বিনিয়োগ, লভ্যাংশ কিংবা ইপিএস ঘোষণা, প্লেসমেন্ট বাণিজ্য, উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারের বিনা নোটিসে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া— এ ধরনের অনেক ক্ষেত্রেই কোনো স্থিতিশীল নীতিমালা নেই।

বাজার গবেষক রয়েল ক্যাপিটালের সিনিয়র এনালিস্ট আকরামুল আলম বলেন, বাজারের স্বার্থে যেসব করণীয় ছিল সেগুলো যথাযথ না হওয়াই আস্থাহীনতার অন্যতম কারণ। এটি একটি স্পর্শকাতর মার্কেট। এই মার্কেটে অতীতে যারা ম্যানিপুলেশন করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। ফলে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে না। পাশাপাশি তারল্য সংকটও রয়েছে।

বাজারে বিনিয়োগে ভয়ের কারণে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। গত বছর অর্থাত্ ২০১৮ সালে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। যা ২০১৭ সালের চেয়ে ৮৩ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা বা ৩৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। ২০১৮ সালে ২৪২ কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয় ৫৫২ কোটি ০৩ লাখ টাকা। অপরদিকে ২০১৭ সালে গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮৭৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

এদিকে, ইমেজ বৃদ্ধির জন্য নানা পদক্ষেপের কথা বলা হলেও আস্থা ফেরানো যাচ্ছে না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর ঘটনা এখনো ঘটছে। পাশাপাশি ভালো কোম্পানির শেয়ারবাজারে আসছে না। আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক কোম্পানিই ভালো ব্যবসা করছে কিন্তু বাজারে আসছে না। এ ধরনের কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে হবে। যেসব কোম্পানি বিভিন্ন পর্যায়ে বছরের পর বছর ধরে ভ্যাট-ট্যাক্স অব্যাহতি নিয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকরের শর্ত রেখেই সুবিধা ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।