বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মূলধন ঘাটতিতে ১০ ব্যাংক, বাদ যায়নি বিশেষায়িত ব্যাংকও

আপডেট : ০৯ জুলাই ২০১৯, ০৭:২৪

দেশের সরকারি ও বেসরকারি ১০টি ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব ব্যাংকের যে পরিমাণ মূলধন থাকার কথা, সেই পরিমাণ মূলধন নেই। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব রূপালী ব্যাংকও মূলধন ঘাটতির তালিকায় নতুন যোগ হয়েছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সোনালী ব্যাংক মূলধন ঘাটতির তালিকা থেকে বেরিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে দশটি ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়ে। এই সংকটের কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ব্যাংকগুলোতে এখন আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। আমানতের সুদের হার কমানো এবং ব্যাংকে টাকা রাখলে আবগারি শুল্কসহ নানান চার্জের কারণে ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীদের অনীহা দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ আবার শেয়ার বাজার কিংবা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে। অনেকেই জমি কিংবা ব্যবসায় টাকা খাটাচ্ছেন। কারো মতে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অনেকেই পুঁজি খেয়ে জীবনধারণ করছেন। আবার ব্যাংকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমানত প্রাপ্তির অংশও তুলনামূলক কমে গেছে। আমানতে প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে, ব্যাংকগুলো চাহিদামত ঋণ যোগান দিয়ে ব্যবসাও করতে পারছে না। উপরন্তু, শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তাসঞ্চিতি বা প্রভিশনের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। এই প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে মূলধনে টান পড়ছে। যাচাইবাছাই ছাড়া ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের সায় থাকায় শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ বাড়ছে বলে জানা গেছে।

মূলধন সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব খাতের রূপালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো অতীতে ভাল করলেও সেগুলোর কয়েকটি এখন সংকটে রয়েছে। যেমন- বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, এবি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া, বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানও মূলধন সংকটের তালিকায় রয়েছে। সোনালী ব্যাংক আগের তুলনায় ভালো করায় মূলধন ঘাটতির তালিকায় আর নেই। মূলধন সংকটে থাকা ১০ ব্যাংকের মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি ৮ হাজার ৮৮৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ১ হাজার ৫৪ কোটি, জনতা ব্যাংকের ৪ হাজার ৯শ’ কোটি, বেসিক ব্যাংকের ২৩৬ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ১৫৪ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৭৩৫ কোটি টাকা। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৫৬৯ কোটি, এবি ব্যাংকের ৩৭৭ কোটি এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৩৪ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে। বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৪ কোটি টাকা।

ব্যাংকিং সূত্রমতে, কোনো ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হলে, তা কিভাবে পূরণ করবে তার পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে তা মনিটরিং করবে। বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকিং খাতে মূলধন ঘাটতিতে সামগ্রিক দুর্বলতাই ফুটে উঠে। ফিনান্সিয়াল ইকনোমিস্ট ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, ব্যাংকিং খাত দুর্বল হয়ে যাওয়ার লক্ষণ এটি। ঋণ প্রদানে অধিকতর সতর্ক হওয়া এবং ব্যাংকিং খাতকে আরো বেশি ‘প্র্যাক্টিকাল’ হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। তারমতে, এই ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ধাক্কা খেতে পারে। এদের গ্রহণযোগ্যতা বিদেশি ব্যাংকগুলোর কাছে প্রশ্নবোধক হতে পারে।