শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

“উন্নয়ন অভিযাত্রার পেছনে রয়েছে সরকার”

আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৯, ২২:৫৮

“বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্পটি আসলেই চমৎকৃত হওয়ার মতো এবং এ গল্প এখনো শেষ হয়নি। ১৯৭১ এ স্বাধীনতার সময় এদেশের মানুষের মধ্যে যে লড়াকু মানসিকতা তৈরি হয়েছিলো সেটিই এই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পেছনের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। অনেক বাঁধা-বিপত্তি থাকার পরও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থেকেছে এবং সামনের দিনে এ অঞ্চলসহ পুরো বিশ্বের বিনিয়োগকারিদের কাছে বিনিয়োগের জন্য অন্যতম প্রধান পছন্দের জায়গা হতে যাচ্ছে এ দেশ।”

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান শনিবার কোলকাতায় মার্চেন্টস’ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)-এর উদ্যোগে আয়োজিত একটি বিনিয়োগ বিষয়ক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। এমসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট বিশাল ঝাঝারিয়ারর সভাপতিত্বে সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন কোলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার। স্থানীয় বিনিয়োগকারি, উদ্যোক্তা, গবেষক-শিক্ষাবিদ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

ড. আতিউর আরও বলেন যে, ভারতীয় বিনিয়োগকারি এবং উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের প্রতি বিশেষভাবে মনযোগী হওয়া দরকার। কারণ সর্বশেষ বৈশ্বিক মন্দার মুখেও বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল থেকেছে এবং বর্তমানে সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারিরা বাংলাদেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় বিনিয়োগ করছেন। গত এক দশকে সরকারের ব্যাপকভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ব্যবসাবান্ধব নীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে শক্তিশালী আর্থিক সেবা খাতের কল্যাণে বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকের বিচারে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কাজেই বিদেশি বিনিয়োগকারিদের, বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশগুলোর বিনিয়োগকারিদের উচিৎ এখনই বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগানো যাতে সকল পক্ষের জন্যই ইতিবাচক কিছু পাওয়া সম্ভব হয়। সত্যি বলতে বিপুল সংখ্যক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, উন্নততর জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রক্রিয়া সহজিকরণের মতো ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশের সরকার যে মনযোগ দিচ্ছে তা বিনিয়োগকারিদের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক হবে। ড. আতিউরের মতে এসব খাতে নীতি-সংস্কারের চলমান উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার পর দেশে বিনিয়োগের পরিবেশের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। তিনি আরও বলেন যে, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে তার পেছনে সরকার ও ব্যক্তি খাতের একসঙ্গে কাজ করা, আর্থিক সেবা ও বাণিজ্যিক লেনদেন ডিজিটাইজেশন, এবং তরুণ জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগগুলো বিশেষ অবদান রেখেছে। 

সড়ক ও নৌ-পথে প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে যুক্ততা কার্যকরভাবে বাড়ানো গেলে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন ড. আতিউর। গার্মেন্টের পাশাপাশি চামড়া ও পাটজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাতকৃত কৃষি পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিক ও আইসিটি পণ্য রপ্তানিতেও বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। তিনি বলেন যে, ভারতীয় বিনিয়োগকারি ও উদ্যোক্তাদের উচিৎ এসব সুযোগ কাজে লাগানো। উৎপাদন ব্যয় কম এবং দেশের ভেতরেই ভোক্তাদের বিশাল চাহিদার বিবেচনায় প্রতিবেশি দেশগুলো সহ অন্য যে কোন বিদেশি বিনিয়োগকারিরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে উভয় পক্ষের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারেন।

বক্তৃতার শেষে ড. আতিউর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনে যেন কোলকাতার এমসিসিআই বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের সাথে যৌথভাবে কাজ করে সে আহ্বান জানান। কারণ বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কোলকাতাতেই কাটিয়েছেন। জবাবে এমসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন যে, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশীদেরা কাছে যেমন তাদের কাছেও ঠিক তেমনি সমাদৃত। আর তাই আগামীতে ইতোমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার মেলবন্ধন রচিত হয়েছে তা তুলে ধরতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনে এমসিসিআই বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

ইত্তেফাক/আরকেজি