শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শিল্পে নতুন গ্যাস সংযোগ সহজীকরণ

তবুও সাড়া নেই চট্টগ্রামের উদ্যোক্তাদের

আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:০০

শিল্পে গ্যাসের সংযোগ প্রদান সহজীকরণ করা হলেও চট্টগ্রামে নতুন সংযোগ নিয়ে ধীরগতিতে এগোচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে নতুন বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে বলে জানান তারা। এলএনজি আসার পর গ্যাস সরবরাহ বাড়লেও শিল্পে নতুন সংযোগে গতি পাচ্ছে না।

কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে শিল্পে গ্যাস সংযোগের জন্য ব্যাপক আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। প্রচুর আবেদনও জমা পড়ে। কিন্তু এখন অনুমোদিত সংযোগ নিতে আবেদনকারীদের সাড়া কম।

জানা যায়, চট্টগ্রামে বর্তমানে দৈনিক ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আবাসিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকি গ্যাস সিএনজি ফিলিং স্টেশনসহ শিল্প খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন বর্ধিত মূল্যে শিল্পে প্রতি ঘনমিটার ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৭০ পয়সা এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা করা হয়েছে।

এলএনজি সরবরাহের পর চট্টগ্রামে শিল্পে গ্যাসের সংকট কেটেছে। ব্যবসায়ী নেতাদের অভিযোগ, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নতুন বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া নতুন সংযোগে প্রক্রিয়াগত জটিলতা দ্রুত বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করছে। আবাসিকে নতুন সংযোগ প্রদান বন্ধ থাকলেও শিল্পে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি সূত্র জানায়, শিল্পে নতুন সংযোগ চালু হওয়ার পর থেকে ২০৯টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি নতুন সংযোগ এবং বাকি ১০৯টি লোড বৃদ্ধি। দ্বিতীয় দফায় আরও ১৪৬টি সংযোগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে নতুন সংযোগ ১০৪টি ও লোড বৃদ্ধি ৪২টি। কিন্তু অনুমোদিত ও অননুমোদিত নতুন সংযোগ নিয়ে শিল্পোদ্যোক্তাদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিল্পোদ্যোক্তারা। এর ফলে পণ্যের উত্পাদন খরচ বেড়ে যাবে। এসব কারণে নতুন করে শিল্প প্রসার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে নতুন বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই গ্যাস-সংযোগের জন্য আবেদন করেও প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে। আর গ্যাস-সংযোগের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত নানা জটিলতার কারণে ধীরগতি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি মাহাবুব চৌধুরী বলেন, নতুন বিনিয়োগ একেবারে কম। কাস্টমসে আমদানিকারকেরা অতিমাত্রায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে মানুষ বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। গার্মেন্টসের জন্য আনা শুল্কমুক্ত কাপড় কেমিক্যাল পরীক্ষা করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আমরা এ ধরনের নিয়ম অতীতে কোনো সময় দেখিনি। যার ফলে কয়েকশ গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নতুন বিনিয়োগ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চট্টগ্রামে গ্যাস বিপণনের দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, ‘এলএনজি আসার পর শিল্পে নতুন সংযোগে ব্যাপক আশা করছিলাম। যেহেতু বন্দরসহ নানা সুবিধার কারণে চট্টগ্রামকে বিনিয়োগকারী অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। প্রায় ৮০০-৯০০ শিল্পের নতুন সংযোগে আবেদন জমা পড়েছে। আগে শিল্পে নতুন সংযোগের জন্য উচ্চ পর্যায়ে গঠিত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন নিতে হতো। এখন কোম্পানি অনুমোদন দিচ্ছে। সংযোগের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহমেদ মজুমদার ইত্তেফাককে বলেন, ‘শুরুতে শিল্পে গ্যাস সংযোগের জন্য ব্যাপক আগ্রহ দেখেছিলাম। এখন নতুন সংযোগ বাস্তবায়ন আশানুরূপ হচ্ছে না। সংযোগের প্রচুর মালামাল আমাদের মজুত রয়েছে। আমরা দ্রুত সংযোগের ব্যবস্থা করছি।

নতুন বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, ছোটো-বড়ো মিলিয়ে দেশি-বিদেশি প্রতি সপ্তাহে ১০-১২টি রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে।

ইত্তেফাক/জেডএইচ