শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিনিয়োগ-বাণিজ্যে অর্থায়ন

গতিহীন হচ্ছে না তো?

আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:০৬

শিল্প-বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জন জাতীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম ধাপ। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে মানুষের আয় যেমন বাড়ে, তেমনি সঞ্চয়ের মানসিকতা তৈরি হয়। সঞ্চয় বিনিয়োগ হয়ে আবার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। গড়ে ওঠে শিল্প-কলকারখানা। বাংলাদেশে শিল্পে অর্থায়নের উত্স হিসেবে এখনো ব্যাংক নির্ভরতা বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ সংকোচনের ফলে অনেকেরই প্রশ্ন—বাণিজ্য বিনিয়োগে দেশের ব্যাংকিং খাত কি গতিশীলতা হারাতে বসছে?

ব্যাংকগুলোতে দীর্ঘদিন তারল্য সংকট বিদ্যমান। এরই মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কা করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। মন্দার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের অর্থনীতি নতুন কোনো চাপে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। সম্ভাব্য নেতিবাচক পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনি কৌশল প্রণয়ন জরুরি। তবে দেশের ব্যাংকিং খাতকে আগে ঠিক করতে হবে।

এ কথা ঠিক যে, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু কেন? যারা ইচ্ছে করে ব্যাংকের টাকা ফেরত দেন না, তাদের কথা ভিন্ন। কিন্তু প্রকৃত উদ্যোক্তারা ধরাশায়ী হচ্ছেন বিনা দোষে। তাদের ব্যবসার ক্ষতি যদি হয়ে থাকে গ্যাস-বিদ্যুত্সংকটের কারণে, তাহলে দায় কার? অথচ প্রভাবশালীরা কিংবা বিশেষ কোনো গোষ্ঠী নিজস্ব স্বার্থে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ফেরতে গড়িমসি করছে। নামে বেনামে ঋণের পাহাড় গড়ে দিব্যি আছে, সেদিকে অঙ্গুলিহেলনে সাহস কার? বেসিক ব্যাংক, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারির ঘটনা ব্যাংকিং খাতকে বেশ ঝাঁকুনি দিয়ে গেছে। তবু থামেনি প্রভাবশালীদের হাত, কমেনি খেলাপি ঋণ। একদিকে অশুভ প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে জ্বালানিসংকট। নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের চাপ সামলাবে, নাকি পণ্য মান ধরে রাখা ও সরবরাহ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন্ন রাখবে? কারখানা মালিকদের জন্য যেন ত্রাহিদশা।

জ্বালানিসংকট এ মুহূর্তে শিল্পের জন্য বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ দেওয়ার কথা অনেক দিন ধরে বলা হলেও এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাস-বিদ্যুত্সংকটের জন্য যদি শিল্পের চাকা না ঘোরে আর ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধে উদ্যোক্তা ব্যর্থ হন, তাহলে এর দায় কতটা উদ্যোক্তার ঘাড়ে পড়ে—সে প্রশ্ন তো স্বাভাবিক।

বাংলাদেশে এ সংকট দীর্ঘদিনের। বছরের পর বছর পার হলেও পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি ঘটেনি। এমনকি কারখানা স্থাপনের কয়েক বছর পার হলেও গ্যাস-বিদ্যুত্সংযোগ লাগেনি, এমন ঘটনা কি অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক নয়? অথচ উদ্যোক্তার কিস্তি গণনা শুরু হয়ে গেছে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ‘প্রণোদনা’ দিতে গিয়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ব্যাংকিং খাত শিল্পায়নে অর্থায়ন করার জন্য তার উপযোগিতা ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে।

এ অবস্থায় প্রকৃত শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ কিংবা নীতি সহায়তা জরুরি। না হলে শিল্প টিকে থাকবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাও কঠিন হয়ে যাবে। এমনিতেই বিশ্ববাজার এখনো অর্থনৈতিক মন্দা থেকে পুরোপুরি বের হতে পারেনি। তার ওপর ব্রেক্সিট নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবেও গত দুই বছর ধরে দেশে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ খুব কম। ফলে মানসম্মত কর্মসংস্থান হচ্ছে না। যতটুকু হচ্ছে তার বেশির ভাগই অনানুষ্ঠানিক খাতে। এ অবস্থায় সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মধ্যম মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিকল্প নেই।

ইত্তেফাক/কেকে