বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এক-চতুর্থাংশে নামল রপ্তানি উেস কর

আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৪৮

সব ধরনের রপ্তানির উেস কর বিদ্যমান এক শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে রপ্তানিকারকরা পূর্বের চেয়ে এক-চতুর্থাংশ হারে কর পরিশোধ করবেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সোমবার এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে। আদেশের দিন থেকে এ সুবিধা কার্যকর হবে আর বলবত্ থাকবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। এনবিআরের আয়কর বিভাগ প্রাথমিকভাবে হিসাব করে দেখেছে, এতে সম্ভাব্য রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থাত্ রপ্তানিকারকরা এই পরিমাণ অর্থ কর ছাড় পেতে যাচ্ছেন। মূলত গার্মেন্টস খাতসহ রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এর আগে গত বাজেটে রপ্তানির নগদ প্রণোদনা এক শতাংশ হারে বাড়ানো হয়েছে।

এনবিআরের আয়কর বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, আদেশ জারি হওয়ার দিন থেকে এটি কার্যকর হচ্ছে। এর ফলে বড়ো ধরনের রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। চলতি অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার বিবেচনায় এতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব কমবে। এটি চলতি বছর আয়করের লক্ষ্য অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অবশ্য হ্রাসকৃত হারে উেস করের এ সুবিধা আদেশের দিন থেকে না করে গত জুলাই থেকে দেওয়ার দাবি রপ্তানিকারকদের। গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক ইত্তেফাককে বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই উেস কর কমানোর আদেশ যখনই হোক, তা জুলাই থেকেই কার্যকর হতো। রপ্তানি খাতের বিদ্যমান কঠিন অবস্থায় আমরা আশা করব, সরকার জুলাই থেকেই এটি কার্যকর করবে। আমরা সরকারের কাছ থেকে আরো বেশি নীতি-সহায়তা চাই। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গার্মেন্টস রপ্তানি অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এ খারাপ অবস্থা আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।

গত কয়েক অর্থবছর থেকেই রপ্তানির উেস আয়কর নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এক শতাংশ হলেও তা এসআরওর মাধ্যমে এক বছরের জন্য কমানো হয়। এরপর বাজেটে কোনো সিদ্ধান্ত না থাকায় তা যথারীতি এক শতাংশে চলে যায়। এর পর দেনদরবার শুরু হলে স্বল্প সময়ের জন্য এসআরও জারির বিষয়টি এখন অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে।

আরো পড়ুন: হংকংয়ে মসজিদে জলকামান নিক্ষেপের জন্য ক্ষমা চাইলেন ক্যারি ল্যাম

অর্থনীতিবিদরা ঢালাও কর ছাড়ের বদলে রপ্তানির স্বচ্ছ হিসাব ও আয়কর আদায়ে শৃঙ্খলা আনার পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ইত্তেফাককে বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় রপ্তানিকারকদের আয় হোক বা না হোক সমহারে কর দিতে হচ্ছে। অথচ উচিত হলো—যারা আয় করবে, কেবল তাদের ওপর আয়কর আরোপ করা। সবার আয় নিশ্চয়ই সমান নয়; কিন্তু সমানহারে কর দিতে হচ্ছে। এটি করব্যবস্থার মূল নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। এছাড়া এভাবে ঢালাও করহার না কমিয়ে মুদ্রার বিনিময় হার বা অন্য কোনো উপায়ে সহযোগিতা করা যেতে পারে।

রপ্তানি পণ্যের মূল্যের ওপর লাভ-লোকসান যা-ই হোক সরকার উেস কর ২৫ পয়সা হিসেবে কেটে থাকে। এটি উেস কর হিসেবে পরিচিত। তবে পরবর্তী সময়ে প্রকৃত মুনাফা কিংবা লোকসানের ওপর যথাযথ কর প্রযোজ্য হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র দেখাতে হয়। রপ্তানিকারকরা এসব ঝামেলা এড়াতে উেস পরিশোধিত কর হিসেবেই সাধারণত তাদের মুনাফা দেখিয়ে থাকেন। এতে কারো লোকসান হওয়া সত্ত্বেও তিনি মুনাফা দেখান। অন্যদিকে পরিশোধিত করের চেয়েও অনেক রপ্তানিকারকই মুনাফা করলেও তিনি বাড়তি কর দেন না। ফলে ঐ অর্থ অপ্রদর্শিত হিসেবে থেকে যায়।

ইত্তেফাক/বিএএফ