শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাধ্য না হলে কেউ বিমা করেন না

আপডেট : ১৭ জুন ২০২১, ২১:২৬

গত দশ বছরের সরকারের নীতি সহায়তার মাধ্যমে বিমাখাতের পরিধি বেড়েছে। এখন বিমার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত বাধ্য না হলে তেমন কেউ বিমা করতে আসেন না এমন বাস্তবতাও রয়েছে। বিমা খাতের প্রতি মানুষের যে আস্থা সংকট আছে তা দূর করতে পারলে প্রচুর সম্ভাবনাময়ী খাত এটি।  সম্প্রতি দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপচারিতায় দেশের বিমা খাতের প্রসার এবং নতুন বাস্তবতায় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় করনীয় বিষয়ে আলোচনায় এসব কথা বলেন মেঘনা ইনসিওরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক।

আবু বকর সিদ্দিকের মতে, বিমা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনের সুরক্ষার জন্য নয়, সম্পদ অবকাঠামোর আর্থিক নিরাপত্তায়ও বিমার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশে ‘সোর্স এবং ফোর্স’ ছাড়া সাধারনত: কেউ বিমা সেবা গ্রহণ  করেন না। যেমন, ব্যাংক থেকে লোন নিলে বাধ্য হয়ে বিমা করেন। রাস্তায় গাড়ি চালাতে বিমার প্রয়োজন হয় এবং আমদানি রপ্তানীর ক্ষেত্রে নৌ বিমার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

দেশে বিমার অন্তর্ভূক্তি কম হবার পেছনের প্রধান কারন হিসেবে মেঘনা ইনসিওরেন্সের এমডি বলেন, সাধারনত: আমাদের অভ্যাস হল বিশেষ প্রয়োজন বা বাধ্যবাধকতা ছাড়া কোন কিছু করা হয় না। বিমার ক্ষেত্রে আমাদের পারস্পরিক আস্থার অভাব এবং শিক্ষা-দীক্ষাসহ যথাযথ জ্ঞানের অভাব রয়েছে। অনেকেই ইনসিওরেন্স বলতে ভাবে লাইফ ইনসিওরেন্স। অনেকেই জানেনা বিমার মাধ্যমে যেকোন শিল্প কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুর্ঘটনাবশত: আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে ক্ষতিপূরন পেয়ে ঘুঁরে দাঁড়াতে পারে।

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিমার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমাদের দেশে নিজস্ব অর্থে পরিচালিত ব্যক্তি মালিকাকানাধীন প্রতিষ্ঠানাদির অধিকাংশই বিমার আওতায় নেই। যদি এ জায়াগাটিকে বিমার অন্তর্ভূক্তি বাড়ানো যায় তবে বিমা ব্যবসার অনেক অগ্রগতি হবে। আমাদের অনেকেরই বিমা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা নেই। এক্ষেত্রে আমাদের বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। বিমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ নেয়া দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা আবু বকর সিদ্দিক এএমইই কনসালটেন্ট লিমিটেড এ তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন এবং এরপর রাইফেল্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যাপনা করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে বিমা জগতে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু হয় প্রগতী ইনসিওরেন্স কোম্পানীতে যোগদানের মাধ্যমে। তিনি বাংলাদেশ ইনসিওরেন্স একাডেমী থেকে ১৯৯৩ সালে বিমার উপর ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন এবং প্রগতি ইনসিওরেন্স কোম্পানীতে প্রায় ১০ বছর চাকুরী শেষে তিনি বাংলাদেশ ইনসিওরেন্স একাডেমীতে অনুষদ সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বর্তমানের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এই বৈশ্বিক মহামারির প্রভাব আমাদের বিমা শিল্পেও পড়েছে। তবে আশার কথা এই যে, নন-লাইফ বিমা শিল্পে এর প্রভাব অনেকটাই কম। ২০২০ সালে মেঘনা ইনসিওরেন্স বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ শতাংশ পূরনে সক্ষম হয়েছে যেখানে প্রায় ২ মাস ব্যবসায়িক সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ২ মাস বন্ধ না থাকলে হয়ত শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরন সম্ভব হত

করোনাকালীন সময়ে ব্যবসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ২০২০ সালে গ্রস প্রিমিয়াম আয় করেছি প্রায় ৬২ কোটি টাকা এতে অবলিখন মুনাফা হয়েছে ২ কোটি টাকা, মোট সম্পদ দাড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। নন-লাইফ বিমা সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সেলফ ফাইন্যান্সড প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রেও ইনসিওরেন্স বাধ্যতামূলক করা উচিত। পাশাপাশি ইনসিওরেন্স কোম্পানীসমূহের উচিত গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা। বিমার প্রতি জনসচেতনা বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে প্রচুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

বর্তমানে সরকারী সাধারন বিমা কর্পোরেশন ছাড়াও আরো ৪৬টি বেসরকারী নন-লাইফ বিমা কোম্পানীতে প্রায় ত্রিশ হাজার জনবল বিভিন্ন বিমা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন। এ প্রসংগে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বেকারত্ব দূরীকরনে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহ একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। আমরা জানি বিমা কোম্পানির আহরিত প্রিমিয়ামের একটি বড় অংশ ব্যাংক সমূহে গচ্ছিত থাকে যা শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সাম্প্রতিক আলোচনায় আসা তৃতীয়পক্ষ মটর বিমা নিয়ে মেঘনা ইনসিওরেন্সের প্রধান নির্বাহীর বক্তব্য হলো, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইন করে তৃতীয়পক্ষ মটর বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর পিছনে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত কারণ ও রয়েছে। যদিও কম্প্রিহেন্সিভ ইনসিওরেন্স থার্ড পার্টির ঝুঁকি বহন করে কিন্তু তা অত্যন্ত ব্যয়বহল। অপর দিকে আমরা জানি, প্রতি বছর ব্যবহারজনিত কারনে গাড়ির মূল্যের অবনতি ঘটে ফলে কমবেশী ১৫ বছরের অধিক ব্যবহৃত মটরযানের সাধারণত কম্প্রিহেন্সিভ মটর বিমা করা হয় না।