বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জানুয়ারি থেকে ই-পেমেন্টে শুল্ককর পরিশোধ বাধ্যতামূলক

আপডেট : ২৫ মে ২০২১, ০৯:০৪

পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্ককর ও অন্যান্য পাওনা অনলাইনে পরিশোধের লক্ষ্যে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী জুলাই থেকে ২ লাখ টাকার ওপরে শুল্ককর এ ব্যবস্থায় পরিশোধ বাধ্যতামূলক হবে। আর আগামী জানুয়ারি থেকে দেশের সব শুল্ক স্টেশনে যে কোনো অঙ্কের শুল্ককরসহ অন্যান্য ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। 

বর্তমান ম্যানুয়াল ব্যবস্থা তথা ব্যাংকের চালানের মাধ্যমে আর অর্থ পরিশোধ করার সুযোগ থাকছে না। মূলত বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বিদ্যমান শুল্ককর পরিশোধে স্বচ্ছতা আনা ও বিড়ম্বনা কমাতে এনবিআর এ উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো উদ্দেশ্যে এনবিআর এ উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা কতটা ব্যবসাবান্ধব হবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। যেহেতু এর সঙ্গে ব্যাংকিং সেবা এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা যুক্ত রয়েছে, এসব বিভাগের সঙ্গে সঠিক সমন্বয় না হলে কিংবা সব শুল্ক স্টেশনে একইভাবে তা চালু করা না গেলে সুবিধার পরিবর্তে বিড়ম্বনা বেড়ে যেতে পারে।

ইস্যুটি নিয়ে ভাবছে এনবিআরও। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যাংক ও বিটিসিএল-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এনবিআরের শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা। ঐ বৈঠকেও এ ইস্যুটি উঠেছে। এ সময় কর্মকর্তারা এ ধরনের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও তা উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি-রপ্তানির শুল্ককর ই-পেমেন্টে পরিশোধের লক্ষ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে পরিশোধিত অর্থের তথ্য যথাসময়ে শুল্ক বিভাগের কাছে যাওয়ার (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট বা আরটিজিএস) প্রক্রিয়া এখনো পুরোদমে প্রস্তুত হয়নি। অন্যদিকে শুল্ক বিভাগের শুল্ক মূল্যায়নের লক্ষ্যে আধুনিক অনলাইন ব্যবস্থাপনা বা এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড পদ্ধতিও পুরোপুরি গতিশীল হয়নি। আবার যে ব্যাংকের মাধ্যমে (প্রাথমিকভাবে সোনালী ব্যাংক) অর্থ পরিশোধ হবে, তাদের নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য সহায়ক ব্যবস্থাপনাও ই-পেমেন্টের জন্য পুরো প্রস্তুত নয়। অন্যান্য ব্যাংকও এ প্রক্রিয়ায় অর্থ পরিশোধের জন্য আরটিজিএস ব্যবস্থায় আসেনি কিংবা ঐসব ব্যাংকের অনলাইন বা ই-ব্যাংকিং সুবিধা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। শুল্ক বিভাগের অর্থ পরিশোধের সঙ্গে মিল রেখে ব্যাংকগুলোর আরটিজিএস কার্যকর না থাকলেও তাতে বিড়ম্বনা দেখা দেবে। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন ও গতিশীল ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা, পেমেন্ট সফল না হলে দ্রুত অর্থ ফেরত হওয়ার উপায় কী হবে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ই-পেমেন্ট বিষয়ে যথাযথ অভিজ্ঞতার ঘাটতিসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

দেশের অন্যতম পোশাক পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ফতুল্লা অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান ইত্তেফাককে বলেন, ই-পেমেন্ট ব্যবস্থাটি সফলভাবে কাজ করলে তা ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা নিশ্চিত করবে। কিন্তু এর সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কোথাও গলদ হলে তাতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। দেখা গেল সার্ভারে ত্রুটি। বলবে, টাকা আসেনি। এসব কারণে আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আমাদের জন্য একদিনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সব ব্যাংক যদি এ সুযোগের আওতায় না আসে, কিংবা এ ব্যবস্থা চালু না করে তাহলেও এতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসবে না।

বর্তমানে আমদানি-রপ্তানির শুল্ককর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সরাসরি কিংবা সিএন্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে ব্যাংকের পে-অর্ডারে পরিশোধ করে থাকেন। ই-পেমেন্ট চালু হলে ঘরে কিংবা অফিসে বসেই এ কাজটি করা যাবে। তবে এ ধরনের অনলাইন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এনবিআরের অতীত অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনেক অর্থ ব্যয়ের এ ধরনের উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি কিংবা প্রত্যাশিত ফল আসেনি। তবে এনবিআরের শুল্ক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, ই-পেমেন্ট বাস্তবায়নে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তাদের সাম্প্রতিক এক সভায় আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

ইত্তেফাক/কেকে