শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যে কারণে সংকট

আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ০২:২১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়নে গত বছর ২৩ অক্টোবর ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পের প্রথম ধাপে ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের তিনটি হলের নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে গত ৩০ জুন ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের দুটি হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এরপর অপরিকল্পিতভাবে হল নির্মাণের প্রতিবাদে গত ৮ জুলাই থেকে আন্দোলনে নামে ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ’ নামে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের একাংশ। 

আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উন্নয়ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা জনসম্মুখে আনার আশ্বাস দেন উপাচার্য। পরে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে উন্মুক্ত আলোচনা সভা আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় মহাপরিকল্পনা প্রদর্শন করলে তার ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

পরিকল্পনাটি পুনর্বিন্যাস না হওয়া পর্যন্ত উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখারও অনুরোধ করেন তারা। সভায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বক্তব্য চলাকালে উত্তেজনা ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হলে সুরাহা ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়। পরে ফের মেয়েদের হল নির্মাণের কাজ শুরু হলে ১ আগস্ট উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ। 

আরও পড়ুন: বাড়িতে ডেকে নিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিশুকে ধর্ষণ করেন মাদরাসা অধ্যক্ষ, পরে গ্রেফতার

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পরিকল্পনা পর্যালোচনা ছাড়া কাজ শুরু না করার অনুরোধ জানান। সে সময় ক্যাম্পাস বন্ধের মধ্যে গাছ না কাটার দাবি জানান তারা। পরে ৩ আগস্ট একই স্থানে ফের গাছ কাটা শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর আবারও শুরু হয় আন্দোলন। 

আন্দোলনের মুখে ২১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প কার্যক্রম নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে প্রশাসন। ১৪ সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয় নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে। আন্দোলন চলমান থাকাকালে ২৩ আগস্ট বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পাশে ছেলেদের হলের জন্য নির্ধারিত স্থানে আবারো গাছ কাটা শুরু হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আবারো আন্দোলনে নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। আন্দোলন চলাকালেই ভিসির বাসভবনে প্রকল্পের টাকা থেকে ছাত্রলীগকে ২ কোটি টাকা দেওয়ার অভিযোগ তুলে আন্দোলনকারীরা। এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হলে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আবারো আন্দোলনে নামেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

এবার তারা ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ প্ল্যাটফর্মে ভিসি বিরোধী আন্দোলন করছেন। উপাচার্যের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের মাঝে ১৫ অক্টোবর ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ নামে নতুন প্লাটফর্ম গড়ে তুলে উপাচার্যপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রাখার দাবিতে ও সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, কালো পতাকা মিছিল ও মৌন মিছিল করেন তারা। সর্বশেষ উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পক্ষে ৯৪৩জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষর সংগ্রহ করে উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধানের লক্ষ্যে সেই স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি আচার্যের কাছে পাঠান তারা। অন্যদিকে গত ২৪ অক্টোবর থেকে উপাচার্য অপসারণ মঞ্চ বানিয়ে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। পরে গত ২৮ অক্টোবর থেকে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করে আসছেন তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

সর্বশেষ গত সোমবার থেকে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বাসভবন অবরোধ করে রাখে। এর পরেই ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে শিক্ষক সাংবাদিকসহ ৩০ জন আহত হন।

ইত্তেফাক/এসি