মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঢাবির এসএম হল

বহিরাগতকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, নেপথ্যে কর্মচারী নিয়োগ

আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:১৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে এক বহিরাগতকে কেন্দ্র করে হল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সুজন নামের এক বহিরাগত আহত হয়। এর রেশ ধরে বেশ কয়েকটি রুমে ভাঙচুরও চালানো হয়। 

বহিরাগতকে ইস্যু করে হামলা হলেও হামলার নেপথ্যে ছিল হলের কর্মচারী নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি। কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে স্বচ্ছতা এবং অস্বচ্ছতাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব চলছিলো হলের ভিপি এমএম কামাল উদ্দিন ও জিএস জুলিয়াস সিজারের মধ্যে। হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কর্মীদের পাল্টাপাল্টি হামলায় কয়েকটি রুমের আসবাবপত্রসহ দরজা, জানালা ভেঙে গেছে। ঘটনার সময়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হলের শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায়, হলের দ্বিতীয় তলার ১৫২ নম্বর রুমে সুজন নামে এক বহিরাগত বিগত কয়েক বছর ধরে অবস্থান করছে। হল সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক মিলন খানের সহায়তায় সেখানে অবস্থান ওই বহিরাগত করেন বলে অভিযোগ। বহিরাগত উচ্ছেদ করতে গিয়ে বিকালে হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক জুলিয়াস সিজার ও হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পিয়াসের নেতৃত্বে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এসময় সুজনকে মারধর করা হয়। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার পর সমাজসেবা সম্পাদক মিলন খানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের খুলনা অঞ্চলের নেতাকর্মীরা হলের জুলিয়াস সিজার ও পিয়াসের নিয়ন্ত্রণে থাকা রুমগুলোতে ভাঙচুর চালায়। 

ইত্তেফাকের অনুসন্ধানে জানা যায়, হলের কর্মচারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে হল সংসদে দুই গ্রুপ তৈরি হয়। জিএস জুলিয়াস সিজারের নেতৃত্বে এদের এক পক্ষ হল প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপে কর্মচারী নিয়োগ দিতে চায়। অন্যদিকে ভিপি এম এম কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে অন্য একটি গ্রুপ হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপের বাইরে নিজেদের হস্তক্ষেপে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে হল সংসদের ভিপি এম এম কামাল উদ্দিন ও জিএস জুলিয়াস সিজারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। সূত্রটি জানায়, নিয়োগ নিয়ে বেশ কয়েকবার হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে বসেছে হল সংসদের একটি গ্রুপ।

নিয়োগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজার। তিনি বলেন, কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে কথা শুনে আসছিলাম। এ নিয়ে হল সংসদের কয়েকজন প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বসেছিলো বলে শুনেছি। তবে মারামারিতে এ দ্বন্দ্বের কোন প্রভাব ছিলো না বলে জানান তিনি।

এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভিপি এম এম কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, হলে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। নিয়োগ নিয়েও কোন সমস্যা হয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলতে হল প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোয়ার্দ্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

এদিকে হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও  প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোরদার হলে অবস্থান করছিলেন বলেও জানা যায়। তাদের উপস্থিতি উপেক্ষা করে এই হামলার ঘটনা ঘটে। 

ঘটনার বিষয়ে হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজার তালুকদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন এসএম হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অছাত্র থাকছে। এখানে থেকে তারা বিভিন্ন অপকর্ম করে। আজ আমরা হল সংসদ ও হল ছাত্রলীগের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি অছাত্র ও বহিরাগত উচ্ছেদ করে হলকে বৈধ ছাত্রদের জন্য বসবাসযোগ্য ও মাদকমুক্ত করবো। তার প্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিযান চালিয়ে একজনকে ধরেছি। এর নামে অভিযোগ আছে, সে সমাজসেবা সম্পাদক মিলন খানকে টাকা দিয়ে ভাড়া থাকে।’

ইত্তেফাক/জেডএইচ