শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঢাবিতে পরপর ককটেল বিস্ফোরণ কীসের আলামত!

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:৪৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা কারণে আন্দোলন সংগ্রাম চললেও বিগত কয়েক বছর বিস্ফোরণের ঘটনা নেই। অথচ গত চার দিনে ক্যাম্পাসে চার বার ককটেল বিস্ফোরণ কিসের আলামত? পরপর এসব বিস্ফোরণ ঘটলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি প্রশাসন। এসব ঘটনার সবগুলোই ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনকে ঘিরে হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে মধুর ক্যান্টিনের গুরুত্ব থাকায় এ জায়গাকে ঘিরে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তারা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ককটেল ফুটিয়ে একটি চক্র রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাদের সে সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে কুচক্রীমহল এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি, মামলা হয়েছে। আমরা যাচাই করে দেখছি কারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারা এসব করছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু সংগঠন, যারা শিক্ষার ধারাকে নষ্ট করতে চায়, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়, তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে।

মধুর ক্যান্টিনকে ঘিরে গত চার দিনে চার দফায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মধুর ক্যান্টিনের পশ্চিম পাশে ও আইবিএর পুরাতন গেট সংলগ্ন স্থানে এবং গত রবিবার সকালে একই জায়গায় আরো তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এছাড়া বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আরো একটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। একটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিআর আবরারের গাড়ি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রথম দিন বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। দ্বিতীয় দিন রবিবার ১০টা এবং বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় দুইটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময়গুলোতে নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখর থাকে মধু। কিন্তু কোনো ঘটনায় দুষ্কৃতকারীদের ধরতে পারেনি কেউ। এমনকি কেউ দেখেনি পর্যন্ত কারা ককটেল নিক্ষেপ করেছে। প্রথম দিনের ককটেল ছিল অবিস্ফোরিত এবং দ্বিতীয় দিন ছিল চারটি ও তৃতীয় দিনে দুইটি বিস্ফোরিত ককটেল।

শিক্ষার্থীদের ধারণা, ককটেলগুলো মধুর ক্যানটিনের সামনে অবস্থিত কলাভবনের ছাদ থেকে ফেলা হয়েছে। কারণ বিস্ফোরিত হওয়ার সময় ঐ স্থানের আশপাশে কাউকে দেখা যায়নি। যদি কেউ নিচ থেকে বিস্ফোরণ করত, তাহলে আশপাশের লোকজন দেখতে পেতেন।

ঘটনাগুলো ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের বক্তব্য, কয়েকদিন ধরে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এর জের ধরে এ ধরনের ঘটনা তারা ঘটাতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ছাত্রদলের বিদ্রোহী গ্রুপ এটা করে থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১০ বছর কোনো ধরনের ককটেল বিস্ফোরণ হয়নি, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বাধা হয় এমন কাজ ছাত্রলীগ কখনো করেনি। ছাত্রদলের কেউ নিয়মিত ছাত্র নয়, শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই সেজন্য তারা এ ধরনের কাজ করার চেষ্টা করছে।

তবে ছাত্রদল এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, দীর্ঘদিন পর তারা ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছেন। ক্যাম্পাসে তাদেরকে বিতর্কিত করতে এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান বলেন, মধুর ক্যান্টিনের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় আমরা কেন ককটেল ফোটাতে যাব। যেখানে সারাদিন সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন, গোয়েন্দা সংস্থা সব সময় আমাদের ট্রেইস করছে। যেখানে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে, সে স্থানে সিসিটিভি রয়েছে। তা দেখে প্রশাসন শনাক্ত করতে পারবে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ককটেল বিস্ফোরণ করে কেউ রেহাই পাবে না। আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি সর্বদা সজাগ রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় আমরা সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাত্ করে দিতে পারব।

ইত্তেফাক/আরকেজি