বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:১১

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অচল রাজশাহীর বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে কর্তৃপক্ষ কলেজটি বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রদের শনিবার রাত ৮টা এবং ছাত্রীদের রবিবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।

এর আগে কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেয়া তিন দিনের আল্টিমেটাম শেষে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শাহ্ মুখদুম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। কলেজের প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তারা তাদের ১৭ দফা দাবি সংবলিত ব্যানার ফেস্টুন ও প্লাকার্ড পরদর্শন করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানায়। দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরে আসবে না বলেও ঘোষণা দেয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন না থাকায় এই কলেজের শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস পাশ করার পরেও ইন্টার্নশিপ করতে পারছে না। আবার কলেজের হাসপাতালে পর্যাপ্ত রোগী না থাকায় প্র্যাক্টিসও করতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও নানা অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত কলেজটিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে একসপ্তাহ ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। অনুমোদন না থাকার পরও সাত বছর ধরে অবৈধভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীনের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন : খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিএনপির বিক্ষোভ

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, কলেজের প্রথম ব্যাচে ভর্তি হয়েছিল ১৮ জন। কিন্তু নীতিগত অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় শিক্ষক এবং প্র্যাক্টিক্যাল সরঞ্জাম না থাকায় ১৪জন শিক্ষার্থীই কলেজ ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু যারা এমবিবিএস কোর্স শেষ করেছে তারা পড়েছে বিপদে। বিএমডিসির অনুমোদন না থাকায় তারা পাস করেও ইন্টার্ন করতে পারছেন না।  ফলে তারা এমবিবিএস পাশ করেও ডাক্তারি পেশায় যেতে পারছেন না।

একবছর আগে এমবিবিএস পাস করা শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ ও জান্নাত  বলেন,  কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করেই যাচ্ছেন। তার কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক (প্রফেসর) নেই। অনুমোদন নেই বিএমডিসির। ক্লাস হয় না। এখানে ভর্তি হওয়ার পর আমরা তার ছলচাতুরী জানতে পারি। তিনি এখান থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে নানা ফি’র নামে লাখ লাখ নিয়ে অন্য জায়গায় ডেন্টাল কলেজ করছেন। অথচ আমাদের সমস্যা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। কিছু বললেই শুধু সময়ক্ষেপণ করেন। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আন্দোলনে নেমেছি।এ অবস্থায় গেল  ৮ ফেব্রুয়ারি হতে ক্লাস বর্জন চলছে।

অন্যদিকে কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম স্বাধীন বলেন, নানা সমস্যায় তারা এখনো দাঁড়াতেই পারেন নি। বিএমডিসির অনুমোদনের আবেদন করা হয়েছে। তারা পরিদর্শনও করেছেন। তারা যেসব শর্ত দিয়েছে, সেগুলো পূরণের চেষ্টা চলছে। হয়তো দ্রুত অনুমতি পেয়েও যাবো।

সূত্র মতে, এখন পর্যন্ত মোট সাতটি ব্যাচে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় কলেজটিতে। এর মধ্যে প্রথম ২ ব্যাচ ও চতুর্থ ব্যাচে ২৫ জন করে এবং পরবর্তিতে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন মেলে। তবে কলেজটিতে শুরু থেকেই অনুমোদন না থাকা, শিক্ষক সংকট এবং হাসপাতালে রোগী না থাকায় আসন ফাঁকায় থেকে যায়।

এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কলেজ পরিদর্শন শেষে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমোদন দেয়। কিন্তু সেখানে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে এই অনিয়ম রাবি কলেজ পরিদর্শকের নজরে আসার পর ২০১৬ সালে সেই সেশনের কার্যক্রম স্থগিত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু সদুত্তর না পাওয়ায় সেই সেশনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ইত্তেফাক/এমআরএম