দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে একটি আসন থাকার কথা থাকলেও তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ফলে দিনের পর দিন তীব্র আসন সংকটে পড়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি তার আবাসিক চরিত্র হারাচ্ছে। তাই প্রতি বছর ভর্তি হওয়ার পরেই হলের গণরুমে থাকতে হয় নবীন শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আসন আছে ৮ হাজার ২৭৮টি। তবে এর বিপরীতে হলে ছিল ১৩ হাজার ৯১০ জন শিক্ষার্থী। এর পরেও গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষের (৪৯তম ব্যাচ) ২ হাজার ১৩১ জন শিক্ষার্থীকে হল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে ৮ হাজার ২৭৮টি আসনের বিপরীতে হলে অবস্থান করছে ১৬ হাজার ৪১ জন শিক্ষার্থী। এদিকে ছাত্রীদের কয়েকটি হলে ৪৯তম ব্যাচের ছাত্রীদের বরাদ্দ দেওয়া হলেও থাকার জায়গা দিতে পারেনি হল কর্তৃপক্ষ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের ছয়টি বাসা খালি করে প্রায় ২৫০ জনকে সেখানে রাখা হয়েছে।
জানা যায়, প্রতি বছর হলগুলো ধারণক্ষমতার অযোগ্য হলেও নবীন শিক্ষার্থীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফলে তারা হলের কমন রুম, রিডিং রুম, সংসদ রুম, নামাজের কক্ষ ও সাইবার রুম প্রভৃতি স্থানে গাদাগাদি করে থাকে। কিছু দিন পর এগুলো হলের গণরুম বলে পরিচিতি লাভ করে। এক জনের জায়গায় কম করে হলেও তিন-চার জন শিক্ষার্থী থাকতে বাধ্য হন। ফলে পড়াশোনা করা একেবারেই কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া ২য় বর্ষে দুজনের রুমে ছয়-আট জন এবং চার জনের রুমে ১৪-১৬ জনকে থাকতে হয়। এমনকি কোনো কোনো হলে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও আসন ভাগাভাগি করে থাকছেন। এতে চরম মাত্রায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে ১৯৭৩ সালের প্রণীত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দেশে একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের ৪০ ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী আবাসিক হলে অবস্থান করবেন। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বিশেষ অনুমোদন ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে পারবেন না।
এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে ভর্তি হওয়া ৪৯তম ব্যাচের এক নবীন শিক্ষার্থী বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে ভেবেছিলাম হলে উঠে নিজের একটি সিট থাকবে, পড়ার জন্য চেয়ার-টেবিল থাকবে। তবে এখন দেখছি হলের গণরুম নামের একটা কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হবে। নামের সঙ্গে আবাসিক জড়িত থাকার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন ব্যবহার কাম্য নয়। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি বশির আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘এ বছর আসন সংকট থাকায় শিক্ষার্থীদের হলে রাখতে চাইনি। কিন্তু অধিকাংশ হলের গণরুমে শিক্ষার্থীরা উঠে গেছে। তবে আশা করছি ঈদুল ফিতরের পরে ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হল ছাড়লে আসন সংকট সমাধান হবে। শিক্ষার্থীদের আর গণরুমে থাকতে হবে না।’ উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নুরুল আলম বলেন, ‘ছাত্রদের হলগুলোতে গণরুম খালি থাকায় তারা সেখানে উঠেছে। ছাত্রীদেরও কয়েকটি হলের গণরুম খালি থাকায় সেখানে উঠেছে। তবে কয়েকটি হলে গণরুম করারও সুযোগ ছিল না। ফলে তাদেরকে শিক্ষক ও কর্মচারীদের ছয়টি বাসা খালি করে সেখানে রাখা হয়েছে।’
ইত্তেফাক/এসি