শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফাঁকা ক্যাম্পাসে কাটছে করোনাযোদ্ধাদের দিন

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:৪০

সুনসান নীরবতা ১০১ একরের ক্যাম্পাসে। কোথাও নেই কারো ব্যস্ততা। নেই পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠীদের আনাগোনা। এই নীরবতার মাঝে চলছে করোনা ভাইরাসে ভয়হীন একদল যোদ্ধার সংগ্রাম। ল্যাবে ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। চলছে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার কাজ। পরিবার ছেড়ে ফাঁকা ক্যাম্পাসে কাটছে তাদের দিন। তারা জানেন না কবে শেষ হবে এই যুদ্ধ। বলছিলাম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)-এর একদল করোনা ভাইরাসে ভয়হীন যোদ্ধার কথা।

নোবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের আরটি পিসিআর ল্যাবে চলছে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার কাজ। এই নমুনা পরীক্ষার কাজ করছেন নোবিপ্রবির বিভিন্ন বিভাগের ৪০ জন শিক্ষার্থী। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োজিত আছেন তারা। নোবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফিরোজ আহমেদের তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন এই স্বেচ্ছাসেবকরা। নোবিপ্রবি প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় গত ১১ মে থেকে শুরু হয় এই কার্যক্রম। এই ল্যাবে চলছে চাঁদপুর , লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলের করোনার নমুনা পরীক্ষার কাজ।

নোবিপ্রবির ল্যাবে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের অনুমতি পাওয়ার পর তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয় ল্যাব। এছাড়াও করোনা শনাক্তকরণের যাবতীয় বিষয়গুলোর উপর প্রশিক্ষণ করানো হয় এই স্বেচ্ছাসেবকদের।

স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, ল্যাবে করোনা ভাইরাসের শনাক্তকরণ কাজে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেছে। অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফিরোজ আহমেদ তাদের কাজের তত্ত্বাবধান করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা করোনা ভাইরাসের শনাক্তকরণ পরীক্ষার কাজ করছেন। করোনা ভাইরাসের শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য পিপিই, টেস্টিং কিট, গ্লাভস, মাস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। মোট তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের কাজ চলছে। প্রতিদিন দুটি গ্রুপ পালাক্রমে ল্যাবে কাজ করছে। করোনা ভাইরাসের শনাক্তকরণ পরীক্ষার পাশাপাশি রিপোর্ট তৈরি, পরিচ্ছন্নতার কাজসহ ল্যাবের যাবতীয় কাজ করে যাচ্ছেন এই স্বেচ্ছাসেবকরা।

তারা আরো জানান, ফাঁকা ক্যাম্পাসে কাজ করার ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা হচ্ছে তাদের। ল্যাবে কাজ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা অবলম্বন করছেন। দেশের মানুষের কল্যাণে করোনা মোকাবিলায় তাদের এই প্রচেষ্টা সফল হবে বলে প্রত্যাশা করছেন এই স্বেচ্ছাসেবকরা।

এদিকে ক্যাম্পাসের এই যোদ্ধাদের সুরক্ষা ও ল্যাবের করোনা পরীক্ষা সচল রাখার লক্ষ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নোবিপ্রবির ৪র্থ ব্যাচের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর মুরাদ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে উপহার হিসেবে চিকিত্সাসামগ্রী ও নিরাপত্তাসামগ্রী পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। চিকিত্সাসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ১০ পিস পিপিই, ৪০০ পিস কে-নাইনটি ফাইভ মাস্ক, ৫০০ পিস সার্জিক্যাল মাস্ক, ১০০ পিস ফেস শিল্ড। চিকিত্সা সামগ্রীগুলো কুরিয়ারের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যেই নোবিপ্রবিতে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন তানভীর মুরাদ। এ বিষয়ে তানভীর মুরাদ বলেন, সুরক্ষাসামগ্রীর অভাব সত্ত্বেও যারা ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছেন তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে করোনা টেস্ট করে যাচ্ছেন। তাদের এই সাহসিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি আমার অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা করেছি, তাই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের জন্য আমার এই অতি সামান্য উপহার। আমি চেষ্টা করেছি আমেরিকান এফডিএ অনুমোদিত মেডিকেল সুরক্ষাসামগ্রী প্রেরণ করার জন্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়