শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দেড় দশকেও উপ-উপাচার্য পায়নি জবি

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২১, ০৩:১৭

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পূর্ণ হলেও উপ-উপাচার্য ছাড়াই চলছে দেশের স্বনামধন্য এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির আইনেই নেই উপ-উপাচার্যের বিধান। পদটি শূন্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক ও নানা উন্নয়নমূলক কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকেই। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের ধারণা উপ-উপাচার্য থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক জটিলতা দূর হবে, ধীরগতি থাকবে না একাডেমিক কার্যক্রমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন হবে দ্রুত গতিতে। পাশাপাশি সেশনজটসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সমস্যা খুব সহজেই নিরসন হবে।

অভিযোগ আছে, আইন সংশোধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন থেকে প্রশাসনের কাছে দাবি জানালেও এবিষয়ে কোনো সাড়া দেয়নি সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান। আইন সংশোধনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের গাফিলতিকে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যৈষ্ঠ শিক্ষকরা।

তাদের অভিযোগ, সাবেক উপাচার্য তার একক আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য উপ-উপাচার্যের আইন সংশোধনের বিষয়ে কোনো তৎপর ছিলেন না।

এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ এন্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডীন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্যের কাজ ট্রেজারারকে দিয়ে করানো হচ্ছে। কিন্তু ট্রেজারার আর উপ-উপাচার্য দুইটার কাজই আলাদা। উপ-উপাচার্য না থাকার কারণে আমাদের প্রশাসনিক কাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করলেও আমাদের সাবেক উপাচার্য এই আইন সংশোধনের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি। 

তিনি আরও বলেন, আমি শিক্ষক সমিতির সভাপতি থাকাকালীন ২০১৬ সালে উপ-উপাচার্যের আইন বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যুক্ত করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেই। তখন প্রতিটি বিভাগের চেয়ারম্যান থেকে সাইন নিয়ে রেজিস্টারের কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু সেটা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়নি বরং এটি নিয়ে গড়িমসি করেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য খুবই দরকার। এই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে আমি একমত। আমরা ২০১৬ সাল থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এই বিষয় নিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি রিকোমোন্ডেশন লেটারও দিয়েছি। আমরা এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলদল (একাংশ) সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকারিয়া মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনে উপ-উপাচার্য বিষয়টি নিয়ে সংশোধন চেয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর একাধিকবার আবেদন করেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের কাছে এই আবেদনগুলো দাখিল করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে কোন তৎপরতা দেখায়নি। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুইজন করে উপ-উপাচার্য রয়েছে। সেখানে এটি নিয়োগের বিধান আমাদের আইনেই নেই। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের সমসাময়িক প্রতিষ্ঠিত অনেক নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য রয়েছে, আমাদের এখানে নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শতাধিক শিক্ষক রয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপক রয়েছে ১০৭জন, প্রথম গ্রেডের অধ্যাপক রয়েছেন ২৬জন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলেই আইন সংশোধন করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উপ-উপাচার্য নিয়োগ দিতে পারে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছুটিতে থাকলে ট্রেজারার ওনার স্থলাভিষিক্ত হন। আবার ট্রেজারার হিসেবেও ওনার দায়িত্ব রয়েছে। এতে করে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য থাকলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমবে। 

ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিশু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই আইন রাখা হয়নি। যার কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এখনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কাজ গুলো স্থবির হয়ে চলছে। এছাড়াও আমরা সবাই শুধু উপাচার্য কেন্দ্রিক হয়ে গেছি। আমরা চাই দ্রুত আইন সংশোধন করে উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তিনি সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন বলে জানা গেছে।

ইত্তেফাক/এএএম