মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করেন ভিসির ছেলে, বাড়ি নিয়েও দুর্নীতি

আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ০৪:৪১

রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিবের বিরুদ্ধে এবার সরকারি বাড়ি ও গাড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার জন্য বরাদ্দকৃত বাংলোকে গেস্টহাউজ হিসেবে দেখিয়ে কৌশলে তিনি অর্থ আত্মসাত্ করছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গাড়ি অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন ভিসির ছেলে। গাড়ির তেল খরচও বহন করছে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

জানা গেছে, স্থায়ী ভবন না থাকায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ভেতরে ডিভিশনাল কন্টিনিউইং অ্যাডুকেশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজের পরিচালকের বাংলোটি ভিসির বসবাসের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেটি সংস্কারও করা হয়। এরপর গত বছরের অক্টোবর থেকে ভিসির পরিবার সেখানে বসবাস করছে। তবে ভিসি সরকারি অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বাসাটিকে কৌশলে গেস্টহাউজ হিসেবে দেখিয়েছেন। তিনি বিধি মোতাবেক বেতন-ভাতা থেকে বাসাভাড়া কর্তন না করে তা নিয়মিত উত্তোলন ও আত্মসাত্ করছেন।

সূত্র জানায়, শুরু থেকেই ভিসি ঢাকায় থাকেন। আর মাঝেমধ্যে রাজশাহীতে এলে বাসায় থাকেন, কিন্তু ভিসির নামে বরাদ্দের বাসাটিতে তার ছেলে, ছেলের বউ, বউয়ের মা-বাবা এবং শ্যালিকা নিয়মিত বসবাস করছেন। ভিসি বাসাভাড়া কর্তন না করলেও বাসায় ব্যবহূত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র (সাবান, টিস্যু, ফিনাইল, হারপিক ইত্যাদি) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর থেকে সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে ভিসির বেতন স্কেল অনুযায়ী বাসাভাড়া বাবদ ২২ হাজার ৭০০ টাকা, বিদ্যুৎ বিল ৫ হাজার টাকা, ডিশ বিল ১ হাজার ২০০ টাকা, ইন্টারনেট বিল ২ হাজার ৫০০ টাকা, বাসায় ব্যবহূত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামসহ প্রতি মাসে অন্তত ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাত্ করছেন ভিসি।

এদিকে সূত্র আরো জানায়, ভিসির ছেলে ও ছেলের বউ রাজশাহীর গোদাগাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। ভিসির ছেলে তার শ্বশুরের পরিবার নিয়ে ভিসির সরকারি বাসায় বসবাস করেন এবং অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি (রাজ-মেট্রো-১১-০১১৫) ব্যবহার করে নিয়মিত গোদাগাড়ীতে অফিস করেন। শুধু তা-ই নয়, রামেবির ঐ গাড়ি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার রাজশাহী থেকে ঢাকায় যাতায়াত করেন তারা। ঐ গাড়িতে করে একবার ঢাকায় যাতায়াতে তেল ও টোল বাবদ প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে একবার গোদাগাড়ী যাতায়াতে তেল খরচ হয় প্রায় হাজার টাকার।

সূত্রমতে, ভিসির ছেলের ব্যবহূত ঐ গাড়ির পেছনে প্রতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সত্তর হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া ড্রাইভারের বেতন ও গাড়ির মেইনটেনেন্স খরচ তো রয়েছেই। এভাবে প্রায় দেড় বছর ধরে ভিসির ছেলে অবৈধভাবে রামেবির গাড়ি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথা সরকারি অর্থের ক্ষতিসাধন করছেন।

ভিসি ডা. মাসুম হাবিবের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি। তবে তার ছেলে ডা. আস-আদ হাবীব বলেন, ‘এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই বাসাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।’ এ ছাড়া রামেবির গাড়ি ব্যবহার করে অফিসে যাতায়াতের বিষয়টিও অসত্য বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ খালেদ বলেন, বাড়িভাড়ার টাকা বেতনের সঙ্গে আসে। তাই ভিসি স্যারই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে ভিসির ছেলের গাড়ি ব্যবহারের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একের পর এক এডহক ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, জামায়াত-বিএনপিপ্রীতি, শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে ঢাকায় থাকা, অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা নেওয়া, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের আসন বৃদ্ধি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ব্যাবহারিক পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে রামেবি ভিসি অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিবের বিরুদ্ধে।