শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জৈব রসায়ন যখন সাফল্যের চাবিকাঠি

আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১১:৪৯

জীবন্ত কলা-কোষের রাসায়নিক যে ক্রিয়া চলে সেটা নিয়ে আলোচনা করে জৈব রসায়ন বা বায়োকেমিস্ট্রি। এটি প্রধানত ল্যাবরেটরি ভিত্তিক বিজ্ঞান। যেখানে রসায়নের জ্ঞান এবং টেকনিক ব্যবহার করে জৈবিক সমস্যার সমাধান করা হয়।

Biochemistry BS/BA - Chemistry Department - Catholic University of America,  Washington, DC | CUA

বায়োকেমিস্ট্রি অর্থাৎ জৈব রসায়ন ক্ষুদ্র স্তরে যেমন কোষের ভেতর শর্করা, উৎসেচক, চর্বি এবং তাদের কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করে আবার দীর্ঘায়িত স্তরে বিপাক, পরিপাক, শ্বসনের মতো বিষয় নিয়েও কাজ করে থাকে। বেশি উৎপাদন কীভাবে সম্ভব, পোল্ট্রি এবং মাছের জন্য কেমন খাবার প্রয়োজন, দানা শস্যে মজুত বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে খাদ্য উপযোগী কী করে করা যায়— এসবই দেখে জৈব রসায়ন।

খাদ্য সংরক্ষণ, কীট পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, সুষম খাদ্য প্রস্তুত করা বা প্রোটিন ঘনীভূত করার জন্যও জৈব রসায়নের সাহায্য নেওয়া হয়। আবার জৈব রসায়নের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল মডার্ন মেডিসিন। শুধুমাত্র ওষুধই নয় চাষাবাদের যুগান্তকারী পরিবর্তনেও সাহায্য করেছে এই জৈব রসায়নই। আর এভাবেই জেনেটিক্স, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেন্সিক, প্ল্যান্ট সায়েন্স এবং মেডিসিনের মতো বিষয়ের মধ্যেও জৈব রসায়ন যুক্ত থাকে।

জৈব রসায়নের মূল শাখাগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যানিমাল বায়োকেমিস্ট্রি, প্ল্যান্ট বায়োকেমিস্ট্রি, মলিকিউলার বায়োলজি, সেল বায়োলজি, মেটাবলিজম, ইমিউনোলজি, জেনেটিক্স, এনজাইমোলজি। অন্যান্য বিজ্ঞানের যে সকল শাখার সঙ্গে বায়োকেমিস্ট্রি যুক্ত সেগুলি হল— বায়োটেকনোলজি, মলিকিউলার কেমিস্ট্রি, এনজাইমেটিক কেমিস্ট্রি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যাল, এন্ডোক্রাইনোলজি, নিউরোকেমিস্ট্রি সহ বেশ কিছু বিষয়। বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষা পাশ করে স্নাতক স্তরে জৈব রসায়ন নিয়ে পড়া যায়। এরপর স্নাতকোত্তর স্তরে জৈব রসায়ন নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা, হাসপাতাল, সরকারি সংস্থা এবং এনজিওগুলিতে জৈব রসায়নবিদ নেওয়া হয়। যদিও এই প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিটিতেই গবেষণা ও পরীক্ষা চালানো হয়। ক্যান্সার বা এইচআইভি বা বর্তমানে নোভেল করোনা ভাইরাসের মতো রোগ জীবাণুকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা খুঁজে বার করা অথবা বিভিন্ন রকমের রোগের উৎস এবং কারণ খুঁজে বের করাই এর লক্ষ্য।

জৈব রসায়ন নিয়ে যে সকল বিভাগে কাজের সুযোগ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—

চিকিৎসা শাস্ত্র

কোন রোগ কী কারণে হয়, কীভাবে সেই রোগ ছড়িয়ে পড়ে, মানুষের শরীরে তার প্রভাব, রাসায়নিক প্রয়োগে কী রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, এগুলি মেডিসিন বায়োকেমিস্ট্রির সফল প্রয়োগে জানা যায়। আর এর উপর ভিত্তি করে নানা রকমের ওষুধ তৈরি করা হয়। তাই ওষুধ শিল্পে কাজের সুযোগ রয়েছে বায়োকেমিস্টদের।

কৃষি
বিভিন্ন দেশে যে খাদ্য সংকট চলছে, বায়োকেমিস্টদের হাত ধরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। গাছের রোগ ও পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিশেষ করে শস্য সংরক্ষণ করে এই সংকটের মোকাবিলা করা যায়। আর এ কারণে চাষাবাদেও বায়োকেমিস্টরা সরাসরি যুক্ত রয়েছেন। কাজের সুযোগ চাষাবাদেও রয়েছে।

পুষ্টি

মানব দেহে খনিজ, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেড, প্রোটিন, ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে নানা ধরনের ডায়েট প্ল্যান তৈরি করতে হয়। এখানেও প্রয়োজন হয় বায়োকেমিস্টদের। বায়োকেমিস্টরা দেখেন এই অত্যাবশকীয় দ্রব্যগুলি শরীরে বেশি বা কম হয়ে গেলে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। আর সে কারণে পুষ্টি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়াগাও বায়োকেমিস্টদের দখলে চলে এসেছে।

পড়া শেষে কাজ মেলে অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট হিসাবে, বায়োমেডিক্যাল সায়েন্টিস্ট হিসাবে, হেলথ কেয়ার সায়েন্টিস্ট, ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রি, ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, ফরেনসিক সায়েন্টিস্ট, সায়েন্টিফিক ল্যাবোরেটরি টেকনিশিয়ান, কেমিস্ট, ফিজিসিস্ট, পলিসি মেকার, ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। যেসব জায়গায় কাজের সুযোগ রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে— হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি ইনস্টিটিউট, কসমেটিক কোম্পানি, ফরেন্সিক ক্রাইম রিসার্চ সেন্টার, ড্রাগ ডিসকভারি ইনস্টিটিউট প্রভৃতি। 

ইত্তেফাক/এফএস