‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও, আমার শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সর্বোপরি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরলস প্রচেষ্টায় আমরা অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সকল বিভাগের স্নাতক শ্রেণির সকল বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা একসঙ্গে গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা একটা বিরল অর্জন।’ শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন।
রবিবার তার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন। যোগদানের দুই বছর পূতি উপলক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার যাত্রা মোটেই সুখকর ছিল না। যশোরের শহরভিত্তিক রাজনীতি আমার আগমনকে স্বাগত জানায়নি। এমনকি তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য আমাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। যদি আমি সেটা করতাম, তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃশ্যত কোনো ঝামেলা থাকত না। কিন্তু, সেক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয় থাকত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জটকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সচেষ্ট আছি এবং বেশিরভাগ বিভাগের জট শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। শ্রেণিকক্ষ, পরীক্ষার হল, নিয়োগ প্রক্রিয়া, প্রশাসনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, হেকেপ (HEQEP) প্রকল্পের আওতায় ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) তত্ত্বাবধানে এখন পর্যন্ত নয়টি বিভাগের কারিকুলাম সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ২৪টি বিভাগেরই কারিকুলাম সম্পূর্ণ করা হয়েছে। ভিশন ও মিশন নির্দিষ্টকরণের পর, outcome-based শিক্ষাকে ত্বরান্বিত করার জন্য ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমি সম্পৃক্ততার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবে সিলেবাস প্রণয়নে ইন্ডাস্ট্রি প্রতিনিধির সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণে একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং কনফারেন্স আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ১০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনার অসমাপ্ত কাজসমূহ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করতে সচেষ্ট আছি। যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০২০ সালের জুন মাসে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অ্যাকাডেমিক ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন, শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের বর্ধিতাংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামের কাজ শেষের পথে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দকৃত ২৮১ কোটি টাকা আরও ১২ শতাংশ বাড়াতে সক্ষম হয়েছি যা দিয়ে বীরপ্রতীক তারামন বিবি হল ও টিএসসি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ সম্পন্ন হবে। আপনারা জেনে খুশি হবেন, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ‘আইসিটি সেন্টার ফর এক্সেলেন্স’ নামে একটি ভবন নির্মাণকাজ খুব শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে।
উপাচার্য বলেন, আগামী ১০বছরের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের সংখ্যা সাত থেকে নয়টিতে, বিভাগের সংখ্যা ২৬টি থেকে ৪৫টিতে উন্নীত এবং একটিমাত্র ইনস্টিটিউট থেকে আরও সাতটি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ১০টি প্রশাসনিক দপ্তর থেকে ৪৫টিতে উন্নীত করা হবে। একটি ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস সার্ভিস সেন্টার’ চালু করা হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি ও প্যাটেন্ট রাইট বাজারজাতকরণের জন্য ‘টেকনোলজি ট্রান্সফার অফিস’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টেবিল অব অর্গানোগ্রাম অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে ৬৫৩ জন শিক্ষক, ৪৮৯ জন কর্মকর্তা এবং ১৪৫৪ জন কর্মচারীর পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। বাড়বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধিও। ৬৫ একর ভূমি অধিগ্রহণসহ একটি অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম, সুইমিংপুল, অ্যাকাডেমিক ভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন এবং আরও অনেকগুলো অত্যাধুনিক গবেষণাগার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের কাছে হেরে যেতে পারে পাকিস্তান : রমিজ রাজা
র্যাগিং এবং মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, মাদকাসক্তিতে জড়িত থাকার অপরাধে ১২ জনকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। র্যাগিংয়ে জড়িত থাকার দায়ে আটজনকে এবং শিক্ষক লাঞ্ছনা, পরীক্ষা ও শ্রেণি পাঠদানে বাধাসৃষ্টি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি নষ্ট ও অসদাচরণের দায়ে আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে শৃঙ্খলা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল মজিদ, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবীব, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. ইকবাল কবীর জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক ড. নাজমুল হাসান প্রমুখ।
ইত্তেফাক/এমআই