শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নুসরাতের পরীক্ষার ফল প্রকাশ, অংশ নেওয়া ২টি বিষয়ে ‘এ’ গ্রেড

আপডেট : ১৭ জুলাই ২০১৯, ২৩:১৯

আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। যৌন নিপীড়নের পর হুমকি-ধামকি মাথায় নিয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে দুটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছিলেন তিনি। বুধবার সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়।

পরীক্ষার ফলাফল বিবরণীতে দেখা যায়, কোরআন মাজিদ, হাদিস এবং উসুলে হাদিস পরীক্ষায় নুসরাত জাহান রাফি ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন।

মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হুসাইন বলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করে। নুসরাতসহ ২৭ জন ফেল করে।

নুসরাত জাহান রাফি মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন জানিয়ে মো. হুসাইন আরও বলেন, সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারলে নুসরাত ভালো ফল করত। লেখাপড়ার প্রতি মেয়েটার কতটা খেয়াল থাকলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশ নেয়। দুই বিষয়ে পরীক্ষাও দেয়।

আরো পড়ুন: বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে থেরেসা মে’র বাসভবনে মরগানরা

পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনরা শোক ধরে রাখতে পারছেন না। বুধবার মাদরাসায় পরীক্ষার ফলাফল জানতে আসা শিক্ষার্থীরা নুসরাতের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদের চোখেও নেমে আসে অশ্রু। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

ফলাফল জানতে আসা নুসরাতের সহপাঠী তামান্না, নিশাত সুলতানা, নাসরিন সুলতানা, সাইফুল ইসলাম ও জাহেদুল ইসলাম জানান, আজ নুসরাতেরও পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে আনন্দে থাকার কথা ছিল। কিন্তু এ নির্মমতায় নুসরাত আজ আমাদের মাঝে নেই। দুটি পরীক্ষায় সে ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে। বাকি পরীক্ষা দিতে পারলে নুসরাত ভালো ফলাফল করতো বলে তারা জানান।

এদিকে আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর থেকে কান্না থামছে না নুসরাতের স্বজনদের। নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের বিলাপ করে কান্না করে যাচ্ছেন। শিরিনা আক্তার বলেন, আমার মেয়ে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে।

২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এ ঘটনায় একই দিন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে তাকে পুলিশ আটক করে।

এ ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলার সহযোগীরা নানাভাবে নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। তারা মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে ৬ এপ্রিল নুসরাতকে কৌশলে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।

অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফেনী সদর হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। সেখানে ১০ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে নুসরাত মারা যান।

ইত্তেফাক/জেডএইচ