শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্থবির ডাকসু

আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০৪:২৩

দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলাবস্থা কাটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠেন। কিন্তু নির্বাচনের পর পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত অভিষেক অনুষ্ঠানও করতে পারেননি ডাকসুর নতুন নেতৃত্ব। ডাকসুর বিভিন্ন সম্পাদকের প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিচ্ছিন্ন কয়েকটি প্রোগ্রাম হলেও মূল নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত ডাকসুর উদ্যোগে কোনো প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

ডাকসুর এই অচলাবস্থার কারণ হিসেবে ভিপি নুরুল হক নুর ছাত্রলীগের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন। অপর দিকে জিএস গোলাম রাব্বানি বলেছেন, ডাকসু গঠনতান্ত্রিকভাবে ঠিকঠাক পরিচালিত হচ্ছে এবং ডাকসুর কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট।

ডাকসুর গত পাঁচ মাসের কার্যক্রম থেকে দেখা যায়, প্রথম অধিবেশনের পর ইনফরমাল বাজেট অধিবেশন ছাড়া কোনো বৈঠক হয়নি। প্রথম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাঁকজমকপূর্ণভাবে অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এই প্রোগ্রামও বাস্তবায়ন করতে পারেননি ডাকসু নেতৃবৃন্দ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে এই প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিপুল উত্সাহ নিয়ে ডাকসু নেতৃত্ব নির্বাচন করলেও নেতৃবৃন্দ তাদের হতাশ করেছেন। নির্বাচনের আগে দেওয়া ইশতেহার অনুযায়ী কোনো প্রার্থীই শিক্ষার্থীদের জন্য দৃশ্যমান কোনো কাজ করেননি বলে অভিযোগ করছেন তারা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী ইত্তেফাককে বলেন, যেসব প্রার্থী ডাকসুতে বিজয়ী হয়েছেন, তারা নিজেদের ইশতেহার অনুয়ায়ী কোনো কাজই করেননি। শুধু লোকদেখানো কিছু কাজ তারা করেছেন, যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বড়ো সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান আসেনি। বিশেষ করে আবাসনের সংকট নিরসন, গণরুম প্রথা উচ্ছেদ, অছাত্রমুক্ত হল, ক্যান্টিনে খাবারের মান বৃদ্ধি, ক্যাম্পাসে গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণসহ চমক লাগানো ইশতেহারগুলো কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

ডাকসুর সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে এসব সমন্বয়হীনতার কারণ হিসেবে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ইত্তেফাককে বলেন, ‘বিভিন্ন কাজে জিএস-এজিএসকে কল দিয়েও পাওয়া যায় না। তারা ছাত্রলীগ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসু প্রতিনিধিরা নিজেরা নিজেরাই সব কাজ করতে চান। বিভিন্ন প্রোগ্রামের বাজেট অনুমোদনের ক্ষেত্রেও আমাকে জানানো হয় না। এছাড়া ছাত্রলীগ মনে করে, যদি ডাকসু কার্যকর হয় এবং শিক্ষার্থীরা যদি তাদের সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন, তাহলে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম করানোর মতো জনশক্তি পাওয়া যাবে না।’

শিক্ষার্থীদের স্বার্থে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করে নুরুল হক নুর আরো বলেন, কয়েক দিন আগে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদকের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের জন্য সাইবার সচেতনতামূলক একটি অনুষ্ঠান ছাত্রলীগের বাধার কারণে পণ্ড হয়ে যায়।

এদিকে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ডাকসু তার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঠিকভাবেই চলছে এবং ডাকসুর কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, অতীতে যখনই ডাকসুতে ছাত্রলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হয়েছে, তখনই শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কিছু হয়েছে। এবারও ডাকসুতে ছাত্রলীগের প্রতিনিধি যারা আছেন, তারা শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আর এসব কাজে শিক্ষার্থীরাও নিজেদের জায়গা থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে কাজ করছে।

আরও পড়ুন: ভরা মৌসুমেও মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় মিলছে না ইলিশ

পাঁচ মাসেও ডাকসুর অভিষেক প্রোগ্রাম না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অথবা রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে ডাকসুর অভিষেক প্রোগ্রাম হবে। তাদের কাছে আমরা সময় চেয়েছি। আশা করছি শিগগিরই আমরা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পারব।’ ডাকসুর কার্যক্রমে ছাত্রলীগ অসহযোগিতা করছে—ভিপি নুরুল হক নুরের করা এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ডাকসুর সব কার্যক্রম ঠিকভাবেই চলছে। এখানে কেউ কাউকে অসহযোগিতা করছে না।

ইত্তেফাক/নূহু