শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইবিতে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে আবদ্ধ কক্ষে পরীক্ষা গ্রহণের অভিযোগ

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:৩৩

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন অনুষদে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে এক শিক্ষার্থীকে তিনটি কোর্সের পরীক্ষা একইসাথে গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর সাজ্জাদুর রহমান টিটুর বিরুদ্ধে। একই অনুষদের অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ওহাব শাহীন মাত্র দুই ঘণ্টায় আটটি ইনকোর্স পরীক্ষা গ্রহণ করার ঘটনা ফাঁস হওয়ায় রীতিমত আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

 

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি ও ছাত্র উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারীর নিকট পৃথক প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। একাডেমিক পরীক্ষার মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন অনৈতিক ও আইন সাংর্ঘষিক দায়িত্বহীনতার জন্য যথাপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকবৃন্দ।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ড. সাজ্জাদুর রহমান টিটু ৯ম ব্যাচের ৩য় সেমিস্টারের এক শিক্ষার্থীর গত বুধবার একসাথে তিনটি কোর্সের ৯ ঘন্টার পরীক্ষা আবদ্ধ কক্ষে গ্রহণ করেন। গোপন তথ্যর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হোন। ওই আবদ্ধ কক্ষে সিটকিনি বন্ধরত অবস্থা থেকে ওই শিক্ষার্থীসহ এক সাথে তিনটি পরীক্ষার খাতা, স্মার্টফোন ও নকল জব্দ করেন। আবদ্ধ কক্ষে কোনো পরিদর্শকের উপস্থিতি ছিল না। পরে ওই শিক্ষার্থী ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা সুযোগ পেয়েছে বলেও জানা গেছে।

 

এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি ছাত্র উপদেষ্টা কর্তৃক বৃহস্পতিবার পৃথক পৃথক দুই লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে উক্ত কোর্স সমূহের প্রশ্নপত্র সংশ্লিষ্ট কোন কোর্স শিক্ষক কর্তৃক প্রণীত নয় বলে উল্লেখ্য আছে। একই অনুষদের এ্যাসিটেন্ট প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ওহাব শাহীনের বিরুদ্ধে ৮ টি ইনকোর্স পরীক্ষার মাত্র দুই ঘন্টায় নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একাডেমিক পরীক্ষায় খাতার মূল্যায়নে স্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতার, ক্লাস বোধগম্য না হওয়া ও ক্লাস না নেওয়ার ব্যাপারে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় সভাপতির কাছে দুই দফায় শিক্ষার্থীরা প্রতিকার চেয়ে আবেদন জানালেও তিনি এক কোর্সের পরিবর্তে দুই কোর্স নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।’

 

অভিযোগের বিষয়ে ড. সাজ্জাদুর রহমান টিটু বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষার সময় আমি ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলাম না। বিষয়টি আমি জানি না।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে আজাদ লাভলু বলেন, ‘সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ হওয়ার পর আবার নতুন করে যে অর্ডিন্যান্স হয়েছে তাতে কি ধরনের শাস্তি উল্লেখ আছে তা আমার জানা নেই। এই পরীক্ষা খাতা পত্র কিভাবে মূল্যায়িত হয় সেটি আমাদের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কে কোন সময় জানানো হয়না।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর ব্যাপারে আমি বিষয়টি লিখিতভাবে প্রশাসনের কাছে বিবৃতি দিয়েছি।’

 

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. নাসিম বানু বলেন,‘ এমন গর্হিত কাজের দরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে এবং শিক্ষার গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। বর্তমান প্রশাসন ইতোমধ্যে দূর্ণীতির কারণে ৩৬ জন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে। এই বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকরা তদন্ত সাপেক্ষে কোন ছাড় পাবেনা বলে প্রত্যাশা করি।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ইবি প্রশাসনের ঘোষিত লক্ষ্য। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতিমুক্ত করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি।’

 

ইত্তেফাক/এএম